বিএসইসির চিঠির জবাবে যা লিখছে ডিএসই
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে সৃষ্ট জটিলতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। রবিবার (৪ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩ টায় লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ডিএসইর দেওয়া প্রস্তাবের ওপর বেশ কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি ইস্যু করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, বিএসইসির চিঠির প্রেক্ষিতে ডিএসই গত ৩ মার্চ শনিবার পরিচালনা পর্ষদের সভা করে। সভায় আলাপ আলোচনা করে বিএসইসির চিঠিতে ব্যাখ্যা চাওয়া সকল বিষয়ের জবাব দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর শেয়ার ২২ টাকা দরে কিনতে চেয়েছে। একই সঙ্গে কিছু টেকনিক্যাল সাপোর্টের কথা বলেছে। ডিএসইর ভাষ্য অনুযায়ী এই টাকার পরিমাণ হবে ৩০০ কোটি টাকা। এর নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই। এছাড়াও চীনের বিনিয়োগের প্রস্তাবে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলো হলো- প্রথমত এই চুক্তিটি হতে হবে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী। দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে কোনো বিভেদ দেখা দিলে তার সমাধানের জন্য লন্ডনের আরবিট্রেশন অনুযায়ী হতে হবে। তৃতীয়ত, ডিএসইর আর্টিকেল পরিবর্তন করে কিছু বিষয় যুক্ত করতে হবে। যুক্ত করা বিষয় পরিবর্তন করতে হলে ডিএসইর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পাশ করার পূর্বে তাদের অনুমোদন নিতে হবে।
বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- যে কোনো নতুন শেয়ার ইস্যু, পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তন, নতুন কোনো কৌশলগত বিনিয়োগকারী অর্ন্তভূক্তি, যে কোনো ইনটেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি যেমন (সফটওয়্যার, প্যাটেন্ট ও অন্যান্য টেকনলজি ইত্যাদি), ডিএসইর আইপিও সংক্রান্ত যে কোন ইস্যু (শেয়ারের মূল্য, স্পন্সর নির্ধারণ,অবলেখক নিয়োগ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন এবং ইস্যু মূল্য নির্ধারণ ইত্যাতি), ১৫ শতাংশের অধিক যে কোন স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করলে,
যে কোনো ধরণের উল্লেখযোগ্য চুক্তি যার মূল্য এককভাবে বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি, যে কোনো ধরণের বিনিয়োগ যার মূল্য এককভাবে বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি, অন্য যে কোন ইস্যু যেটি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে জড়িত,
ডিএসইর আর্টিকেলে ১৩৫ নং ধারায় রয়েছে যে কোন শেয়ারধারী যার ন্যূনতম দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার আছে তার সঙ্গে কোন চুক্তি করতে পারবে না, আর্টিকেলে যাই থাকুক চীনা কনসোর্টিয়াম তার ইচ্ছামত পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে এবং সেটেলমেন্ট গ্রান্টেড ফান্ড কনট্রিবিউশন বাদ দিতে হবে অথবা স্থগিত করতে হবে।
এর আগে কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রস্তাব গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে জমা দেওয়া হয়। ওই দিন বিএসইসি এই প্রস্তাব যচিাই-বাছাই করার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় কমিশন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুইটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়।
এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে একমত পোষণ করেন। তবে তা আর প্রস্তাব আকারে বিএসইসিতে পাঠানো হয়নি।
এরপর নানা দিত থেকে অভিযোগ ওঠে যে, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিতে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এই চাপের নিন্দা করা হয়।
সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর পার্টনার হতে ২২ টাকা দরে ২৫ শতাংশ শেয়ার নিতে আবেদন করে।পাশাপাশি কনসোর্টিয়ামটি ৩৭ মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তিগত সহযোগীতা দেওয়ার প্রস্তাবও দেয় ডিএসইকে।