national_bank_644562557দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড বিশেষ বিবেচনায় ১৩৮ কোটি টাকা ভিআইপি ঋণ দিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছে। কোনো রকম যাচাই-বাছাই না করে আবাসন প্রতিষ্ঠান ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক প্রাইভেট লিমিটেডকে এ ঋণ দিয়েছিল। কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করলেও আসল পরিশোধ করেনি ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক। অবশেষে খেলাপির খাতায় নাম লেখায় প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটির শীর্ষস্থানীয় এক উদ্যোক্তা নিজের প্রয়োজনে এ ঋণ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকমতো কিস্তির টাকা না পাওয়ায় অতি গুরুত্বপূর্ণ এ ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক এখন ঋণ গ্রহীতাকে চাপ দিতে পারছে না। আবার বড় ঋণ হওয়ায় এটি অবলোপনও করতে পারছে না। ফলে খেলাপি ঋণের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণখেলাপির শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক লিমিটেড। কোম্পানিটির কাছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩৮ কোটি টাকা। ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুদ মওকুফ করে দেওয়া হয়। তার পরও প্রতিষ্ঠানটি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না।

জানা যায়, ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক ধানমন্ডিতে একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য ঋণ নিয়েছিল। ঋণের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার না করে অন্য খাতে সরিয়ে নেওয়ায় রুগ্ন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। অপর একটি সূত্র জানায়, ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক ঋণের জন্য কেবল একটি সাইনবোর্ড। শীর্ষ পর্যায়ের ইশারায় ব্যাংক এ ঋণ দিতে বাধ্য হয়। ঋণের টাকা প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো কাজে লাগানো হয়নি।

তবে ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যবসা মন্দার কারণে তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। ধানমন্ডিতে একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির অনেকগুলো ফ্ল্যাট অবিক্রীত। আর এ কারণে ব্যাংকের ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

এতে ঋণখেলাপির তকমা লেগেছে ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্কের গায়ে। এছাড়া সম্প্রতি বিষয়টি ব্যাংকের সঙ্গে মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে অবিক্রীত ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি হলেই ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল তিন হাজার ২৭ কোটি টাকা। উল্লিখিত সময়ে ব্যাংকটিতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৮৬১ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল এক হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।

ওই সময় প্রভিশন ঘাটতির ছিল ১২৩ কোটি টাকা, অর্থাৎ মাত্র ৯ মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি এবং প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৭৩৮ কোটি টাকা।