dse-cseদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার চলছে লাইফ সাপোর্টে, বিনিয়োগকারীদের মাঝে এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এ বাজারের ভবিস্যত কি? আর কতদিন ধৈর্যধারন করতে হবে। বছরের পর বছর একটি স্থিতিশীল বাজারের অপক্ষো করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকরা শুধু আশার বানি শুনাচ্ছে। বাস্তবে কোন ফল দেখা যাচ্ছে না।

আর টানা দরপতনের পর বিনিয়োগকারীরা যখন বিক্ষুপ্ত অবস্থায় হোন তখন লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাজার ঠিক রাখা হয়। এ ভাবে আর কতদিন চলবে। পুঁজিবাজার তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারছে না। আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারে চলছে দরপতন। এই দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে ‘পুঁজি হারানোর’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ফলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এছাড়া কৌশলী প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ না করে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন।

এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়োগ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার টালবাহানা। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক একটাই ‘শেয়ারের দাম আরো কমবে’, তাই ‘এখন বিনিয়োগ করলেই ক্ষতি হবে’।

এসবের ফলে বিক্রেতার তুলনায় কমেছে ক্রেতা, এতে শেয়ারের দামও দিনদিন কমছে। এ কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই থেমে থেমে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। তবে পুঁজিবাজারের এই দরপতন থামাতে সবশেষ সপ্তাহে সরকার ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘লাইফ সার্পোট’ দিয়ে বাজার চাঙ্গা রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।

এর ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইতে দুই কার্যদিবস সূচক পতন আর তিন কার্যদিবস উত্থানের মধ্য দিয়ে পার করেছে। আর চলতি উঠানামার মধ্যে চলছে পুঁজিবাজার।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী জাকির হোসেন বলেন, পুঁজিবাজার সহসাই ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার কারণ ব্যাংক খাতে এখন চলছে তারল্য সংকট, এই সংকট ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মার্চেন্ট ব্যাংকসহ পুঁজিবাজারে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর আমানত-ঋণের অনুপাত কমানোর ফলে ঝুঁকি ছাড়াই ডিপোজিট রেখে মুনাফা বেশি পাওয়ার পুঁজিবাজার ছেড়ে ব্যাংকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার পর্যালোচনা দেখা গেছে, ১৫ ফেব্রূযারী থেকে ২৫  ফেব্রূযারী  টানা সাত কার্যদিবস পর্যন্ত দরপতন হয়েছে। এই দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি) দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠি দেয়। এরপর ডিএসই-সিএসই, ডিবিএ,

মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিএসইর শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ডিএসইর এমডি কেএএম মাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুঁজিবাজারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থের উৎসে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো। সেগুলো অত্যন্ত সাময়িক। আমরা আশা করছি শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা দ্রæতই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং আশা করছি বাজারে এর পজেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে। এরপর দিন বাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বলেন, যেকোনো মূল্যে পুঁজিবাজার যেনো ভালো থাকে। তারপর গত সপ্তাহে টানা তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে।

ওই তিনদিন সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) প্রথম সারির অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান (ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক) শেয়ার কিনে মার্কেট সার্পোট দিয়েছে। ফলে দরপতন থেমেছে। বেড়েছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এই সার্পোটকে ‘লাইফ সার্পোট’ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, মানি মার্কেটে টাকা নেই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নেই। পুঁজিবাজার কীভাবে ভালো থাকবে?

এঙ্কর সিকিউরিটিজের সিইও সাইফুল ওয়াদুদ লেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ‘গুমট’। আর্থিকখাতে চলছে চরম অনিয়ম। এই সময়ে নতুন করে যারা বিনিয়োগ করছেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে কেউ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন না। নির্বাচনী বছর বিনিয়োগকারীদের যে আশা ছিল তা ব্যস্তে যাচ্ছে।