dse investmentমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ডিএসইর অংশীদারিত্ব নিয়ে চীন-ভারত ছায়াযুদ্ধ চলছে। আর ডিএসই কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কালক্ষেপন করছে। তেমনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার জন্য ভারতের কনসোর্টিয়ামকে পছন্দ বিএসইসি’র। তবে ডিএসইর পছন্দ চীনের কনসোর্টিয়ামকে এবং এই কনসোর্টিয়ামকেই পর্ষদ সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। যে কারনে বিএসইসি ভোগান্তি দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে প্রস্তাব অনুমোদনে কালক্ষেপন করছে বলে মনে করছেন ডিএসই কর্তৃপক্ষ। অথচ বিএসইসির পছন্দের ভারতের কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিলে ডিএসইর লোকসান হবে ৬১৫ কোটি টাকা।

ডিএসইর এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশীরা যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা এ জাতীয় শর্ত দেয়। তবে তারা এর খারাপ ব্যবহার করে না। তারা খুবই প্রফেশনাল। ব্যবসায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য।

page 1 (34)ডিএসইর সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য যে শর্ত দিয়েছে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিসেএর চেয়ে কঠিন শর্ত দেওয়া হয়। তবে বিএসইসি ভারতকে পছন্দ করেও যেহেতু পাচ্ছে না,তাই ডিএসইকে কিছুটা হেনস্থা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দেশের শেয়ারবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে হলে, অবশ্যই কৌশলগত বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে চীন এগিয়ে। আর ভবিষ্যত চিন্তা করে চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা করে কিনতে চেয়েছে। তারা সহজেই ডিএসইকেগেøাবালি লিংক করাতে পারবে। এছাড়া নতুন নতুন ব্যবসায় নিয়ে আসবে। এক্ষেত্রে দেশের শেয়ারবাজার উপকৃত হবে, ক্ষতির কোন সুযোগ নাই।

কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে ডিএসইকে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম কারিগরি ও নগদসহ প্রায় ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে। আর ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ৬৭৫ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে। তবে কারিগরি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেনি।

এমতাবস্থায় বিএসইসির পছন্দের ভারতের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করলে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের লোকসান হবে ৬১৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। এক্ষেত্রে ডিএসইর ১৮০ কোটি শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ার প্রতিটি ২২ টাকা দামে ৯৯০ কোটি টাকায় কিনবে। পাশাপাশি ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে। যাতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে ১ হাজার ২৯০ কোটিরও বেশি টাকা পাবে ডিএসই।

অপরদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা করে ৪৫ কোটি শেয়ার ৬৭৫ কোটি টাকায় কিনতে চায়। আর প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে কোনো প্রযুক্তি সিস্টেম না দিয়ে শুধু পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ডিএসইর সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে একটি ব্যবাসায়িক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে।

গত ১৯ ফেব্রæয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। আর ২২ ফেব্রæয়ারি সকালে চীনেরকনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডিএসইর সেক্রেটারি মো. আসাদুর রহমান বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেয়।

এর আলোকে একইদিনে ডিএসইর প্রস্তাব যাছাই-বাছাইয়ের জন্য বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহবায়ক ও নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলমকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের কমিটি করে বিএসইসি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নির্বাহী পরিচালক ড.এটিএম তারিকুজ্জামান ও নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

ডিএসইর প্রস্তাব যাছাই-বাছাইয়ে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি চীনা কনসোর্টিয়ামের কিছু শর্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৭ ফেব্রæয়ারি ডিএসইকে লিখিতভাবে জানায় বিএসইসি। এরই আলোকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ ৪ মার্চ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে সেই ব্যাখ্যায় বিএসইসি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। উল্লেখ্য চীনের কোনসোর্টিয়াম বেশি টাকা দিতে চাইলেও বিএসইসি অজানা কারনে ভারতের পক্ষে। তবে ডিএসই দুই কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে চীনা দুই স্টক এক্সচেঞ্জকেই বেছে নিয়েছে।