aramit-cement-limitedমহিউদ্দিন ফারুক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  ধারাবাহিক লোকসান বাড়ছে আরামিট সিমেন্ট লিমিটেডের। কাগজ কলমে লোকসান দেখিয়ে বছরের পর বছর কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করে চলেছে পুঁজিবাজারে তলিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি আরামিট সিমেন্ট। গত দুই বছর ধরে লোকসান দেখিয়ে ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করে আরামিট সিমেন্টের বিনিয়োগকারীদের।

ফলে মুল পুঁজি নিয়ে লোকসান দিন কাটাচ্ছেন এ কোম্পানি বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের টাকায় ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মুনাফা করলেও তাদেরই অবহেলিত করে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির টাকায় আরাম-আয়েশে জীবন-যাপন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, বাড়তি ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধে মুনাফায় টান পড়েছে চট্টগ্রামের শিল্পগ্রæপ আরামিটের সহযোগী ‘আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড’-এর। আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির ব্যাংকঋণ বেড়েছে ৯৩ কোটি টাকা। এ কারণে গত অর্থবছরের উৎপাদন ও বিক্রয় বাড়লেও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে লোকসানে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে লভ্যাংশ বঞ্চিত বিনিয়োগকারীরা হতাশ।

কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যাংকঋণ ছিল ১৭০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ঠিক এক বছর পর এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ব্যাংক দায় বৃদ্ধি পায় ৯৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর এ জন্য ঋণের সুদ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে অতিরিক্ত ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়।

অন্যদিকে গত ২০১৬-১৭ সালের সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি দুই লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৭ টন সিমেন্ট বিক্রি করেছে, যার নিট মূল্য ১৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। একই সময়ে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৭ কোটি ছয় লাখ টাকা। আগের ১৮ মাসে (২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন) এর পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
এদিকে গত ২০১৬-১৭ হিসাববছরে আরামিট সিমেন্টের নিট লোকসান দাঁড়ায় ১০ কোটি ছয় লাখ টাকা।

এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় দুই টাকা ৯৭ পয়সা। যদিও তার আগের ১৮ মাসে কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছিল দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ সময় আরামিট সিমেন্টের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৮৪ পয়সা। এছাড়া গত হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভিপিএস) হ্রাস পেয়েছে। ২০১৬-১৭ হিসাববছরে এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১১ টাকা ১৬ পয়সা, আগের ১৮ মাসে যা ছিল ১৪ টাকা ৩৩ পয়সা।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেশের সিমেন্ট খাতে গত অর্থবছরের বিক্রয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পরিচালনা ব্যয়, আন্তর্জাতিক বাজারের কাঁচামালের দর বৃদ্ধি, দেশীয় বাজার অন্যান্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে প্রায় সবগুলো কোম্পানির কমেছে মোট লাভ, অপারেশন লাভ এবং আয়কর পরবর্তী লাভ।

ফলে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রায় সবগুলোর কোম্পানির কর পরবর্তী নিট মুনাফা কমেছে। আমাদেরও একই অবস্থা। তবে আমাদের ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধের কারণে মুনাফা মাইনাস হয়েছে যা চলতি বছরেও এ পর্যন্ত আমরা লোকসানে আছি।

এ বিষয়ে কোম্পানির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. শাহ আলম এফসিএমএ বলেন, ‘গত অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ঠিক।’
ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রæপের চেয়ারম্যান।

এ গ্রæপের পাওয়ার, ফুটওয়্যার, থাই অ্যালুনিয়ামসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের একজন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে শেয়ারবাজারে আসা এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৪৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৬ দশমিক ৯৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৩৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার।