dseদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর দরপ্রস্তাবে দেওয়া সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনের জোট শর্তগুলোর মধ্যে ১৬টি শর্ত পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে। এ ছাড়া তিন শর্তে পরিবর্তন এনেছে তারা। বাংলাদেশের আইন ও ডিএসইর অন্য অংশীদারদের স্বার্থপরিপন্থি এসব শর্তের ব্যাখ্যা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো প্রত্যাহার করেছে চীনের জোট। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, চীনা জোটের দেওয়া শর্তগুলো বাংলাদেশের আইন পরিপন্থি এবং ডিএসইর অন্য অংশীদারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবে।

জোটের অসম্পূর্ণ দরপ্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটির ব্যাখার পরিপ্রেক্ষিতে ৪ মার্চ ১২টি ও ৬ মার্চ ৪টিসহ মোট ১৬টি শর্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীনের জোট।

চীনা জোট নিয়ন্ত্রক সংস্থার আপত্তির প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের বদলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী করতে চুক্তির সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য চুক্তির বিষয়ে বিবাদ প্রশ্নে লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন অনুযায়ী করার পূর্বশর্ত বহাল রয়েছে।

এ ছাড়া ডিএসইর ন্যূনতম শেয়ারধারীর সঙ্গে কোনো চুক্তির বিষয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনসংক্রান্ত ধারা থেকে চীন জোটের অব্যাহতির শর্ত বহাল রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চীনা জোটের শর্ত ছিল শেয়ারদর নির্ধারণ। এ ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাববছরের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে চীনা জোট ডিএসইর প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা প্রস্তাব করে। কিন্তু যদি পরবর্তী সময়ে ডিএসইর সম্পদমূল্যে কোনো পরিবর্তন ঘটে, তাহলে দরপ্রস্তাবেও পরিবর্তন আসবে বলে শর্তে উল্লেখ ছিল।

ডিএসই বলছে, মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি সাধারণভাবেই স্বীকৃত। তাই এটি বহাল রাখলেও একই বিষয়ে ডিএসইর কর্মকর্তাদের সুবিধা ও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য পৃথক করার যে শর্ত ছিল, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীনা জোট।

চীনা জোট ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য আরো যেসব শর্ত দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অবসায়ন, লিকুইডেটর নিয়োগ, স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রমে পরিবর্তন, মেধাস্বত্বসংক্রান্ত যেকোনো পণ্য ক্রয়,

আইপিওতে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ, উদ্যোক্তা নির্ধারণ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন, অডিটর নিয়োগে তাদের অনুমোদন নেওয়ার শর্ত আরোপ করে। এসব বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো হয়। পরে তা চীনা জোট অবহিত করে ডিএসই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীনা জোট তাদের শর্ত প্রত্যাহার করে নেয়।

১০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ অথবা ঋণ দেওয়া-নেওয়া ও ১৫ শতাংশের অধিক যে কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে চীনা জোটের কাছ থেকে ডিএসইকে অনুমোদন নিতে হবে— এমন শর্তও দেওয়া হয়। সেটিও প্রত্যাহার করে নেয়। এ ছাড়া ডিমিউচুয়ালাইজেশন বা বিন্যস্তকরণ আইন ভঙ্গ করে একজন উপপ্রধান কারিগরি কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতা চেয়েছিল জোট।

আইনের ভাষার ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি অনুসরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এসব শর্তও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেটেলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ড কন্ট্রিবিউশন বাদ বা স্থগিত রাখার শর্তও প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীনা জোট।

এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। এগুলো ছিল পর্যবেক্ষণ। আমরা বিএসইসির নির্দেশনা অনুসরণ করছি।

অবশ্য চীনা জোটের এসব শর্তকে দেশের আইনের লঙ্ঘন কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বার্থ পরিপন্থি বলে ভাবতে নারাজ ডিএসই কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, এতে আইনবিরুদ্ধ কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো শর্ত ছিল না।

ডিএসইর পরামর্শ নিয়েই চীনা জোট শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এসব শর্তারোপ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের বিষয়টি ডিএসই কর্তৃপক্ষ স্বীকারও করেছে। যদিও চীনাদের দেওয়া শর্তকে তারা শর্ত হিসেবে না দেখে পর্যবেক্ষণ বলছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক জানান, দরপ্রস্তাবের আগে চীনাদের কাছে শেয়ার ক্রয়-সংক্রান্ত একটি খসড়া দেওয়া হয়েছিল। ওই খসড়ার ভিত্তিতেই চীন জোট তাদের পর্যবেক্ষণ দেয়। এটা মূলত শেয়ার ক্রয়-সংক্রান্ত চুক্তির আগের পর্যবেক্ষণ।

সম্পদমূল্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারদরের পরিবর্তনে চীনা জোটের প্রস্তাবটি যৌক্তিক বলে মনে করছে ডিএসই। সূত্র জানায়, পরিচালকের সংখ্যা পরিবর্তন কিংবা ভোটের অধিকার বিষয়ে কোম্পানি আইনেই কিন্তু স্বল্পসংখ্যক বা মাইনর শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা আছে।

এখানে চীন জোট ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা যদি পায় তারপরও পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা মাইনর। কারণ ডিএসইর বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররা একসঙ্গে ৪০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবেন- এ হিসেবে তারা মাইনর। যদিও এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।

৩ কোটি ৭১ লাখ ডলারের প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়টি কোনো নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে কি না— বিএসইসির এমন প্রশ্নে ডিএসই জানিয়েছে, এটি চীনা জোটের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন, যা কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই করা হয়নি। প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাবটি শেয়ারদর প্রস্তাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি ডিএসইর।