আইএমএফের চোখে বাংলাদেশের অর্থনীতির পাঁচ চ্যালেঞ্জ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখা। বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। সংকটে পড়া ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানো। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ অব্যাহত রাখা।
এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, তার প্রভাব এ দেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। সেটাও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে সংস্থাটি। ঢাকা সফররত আইএমএফের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে এসব চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে আর্থিক সংস্থানের ব্যাপারে সরকার কোনো ধরনের সংকটে পড়বে না। তবে আসছে বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের ওপর নির্ভর করবে সে বছরের বাজেট বাস্তবায়ন। এ ছাড়া পরবর্তী ২০১৯-২০ বাজেট থেকে নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন শুরু হলে সেটা হবে আরেক নতুন চ্যালেঞ্জ। এদিকে চলতি মাসে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোনোর আবেদন করবে বাংলাদেশ। ফলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশকে আরও অনেক লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
যদিও মাথাপিছু আয়সহ তিনটি মানদ-ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা হবে আরও চ্যালেঞ্জের। কেননা বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে যে ডিউটি ও কোটামুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করে, তা সীমিত হয়ে যাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নসহযোগীর কাছ থেকে পাওয়া নমনীয় ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। তখন আরও অনেক বেশি সুদ গুনতে হবে বাংলাদেশকে, যার প্রভাব পড়বে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সংকটে পড়া ব্যাংকিং খাতের রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ এ খাতে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্রুত কমিয়ে আনা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে জাতীয় বাজেট থেকে অর্থ দেওয়াটাও অর্থনীতির জন্য শুভ নয় বলে মনে করে আইএমএফ। ফলে খেলাপি ঋণ আদায় এবং ঋণ অবলোপন কমিয়ে আনার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করছে আইএমএফ। ফলে মেগা প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষ করাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি পরবর্তী বাজেটে এসব প্রকল্পের কাজ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার বহির্বিশ্বে নানা ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করছে। ফলে চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমেছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়। এ জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নতুন বাজার অনুসন্ধান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য রপ্তানির নতুন বাজারও অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এই প্রভাবমুক্ত নয়। ফলে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় হলে অন্য সব ধরনের জিনিসপত্রের দামও বাড়তে পারে, যা মূল্যস্ফীতির চাপকে উসকে দিতে পারে বলে মনে করে আইএমএফ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে। দেশের ভেতরেও দাম বাড়বে। আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করছি।