dseদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অব্যাহত দরপতন ও অস্থিরতার বৃত্তে দেশের পুঁজিবাজার। সূচক ও লেনদেনে ঘটছে বড় পতন। বিক্রির চাপে সূচক কমার সঙ্গে কমছে শেয়ারের দাম। এতে বাজার থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে মূলধন। চলতি মাসে মূলধন কমেছে আট হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিদিনই এক হাজার কোটি টাকা করে অর্থ কমছে। গত দুই (রবি ও সোম) কার্যদিবস পুঁজিবাজারে বড় পতন হওয়ায় বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দৃশ্যমান কোনো কারণ না থাকলেও বাজার একেবারেই তলানিতে। এই বিপর্যস্ত অবস্থা নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। কেন বাজার পড়ে যাচ্ছে সে বিষয়টি এখনই বলতে পারছেন না তাঁরা। ক্রমাগত নিম্নমুখিতার কারণ অনুসন্ধান এবং বাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তাঁরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, শেয়ার লেনদেনকারী ব্রোকারস প্রতিষ্ঠান, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি এ বৈঠকে অংশ নেবে বলে সূত্র জানায়।

ব্রোকারেজ হাউস ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, আস্থাহীনতা আর শঙ্কায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছে। দেশের পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারী বেশি হওয়ায় একটানা দরপতন কিংবা গুজবে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে। শেয়ারের দাম কমলে ‘কম দামে’ শেয়ার কেনার আশায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও হাত গুটিয়েছে। বাজারে এই দুরবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবিরও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কেউ কেউ।

জানা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের ঋণ আমানত হ্রাস (এডিআর), রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ভয় আর কৌশলগত অংশীদার নিয়ে বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠানে লড়াইয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এডিআর কমানোয় বাজারে নেতিবাচক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটতি সমন্বয়ে সময় ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘোষণা প্রথমে এলেও পরে ৩১ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থিতিশীলতার শঙ্কায় বাজারে প্রভাব পড়েছিল। এখন সেই শঙ্কা নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। আর কৌশলগত অংশীদার বাছাইয়ে জটিলতাও কমেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে কৌশলগত অংশীদার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। কাজেই দৃশ্যমান শঙ্কার কোনো বিষয় নেই। তবুও বাজার কমছেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন, একটি চক্র কারসাজি করে বাজারকে প্রভাবিত করছে। তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। শেয়ারের দাম কমলে সেই শেয়ার কিনে বাড়তি মুনাফা পেতে চায়। কৌশলগত অংশীদার বাছাইয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানকেই পেতে একটি চক্র সুপরিকল্পিতভাবে বাজারকে প্রভাবিত করছে। কারণ চীনা প্রতিষ্ঠান অংশীদার হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা বড় অংশের অর্থ পাবেন।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক হোসেন বলেন, বাজারে প্রভাব পড়ার মতো দৃশ্যমান কোনো কারণ এখন নেই। এর আগে যেসব কারণ ছিল, সেগুলো সমাধান হয়েছে। তবে কেন বাজারে প্রভাব পড়ছে সেটি চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক হবে। স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও সভার পর বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেকটা ঢিমেতালেই চলছে বাজার। কোনো দিন সূচক কমলে বেড়েছে লেনদেন, কোনো দিন লেনদেন বাড়লে কমেছে সূচক। আর লেনদেনও ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে। যদিও গত বছরের মাঝামাঝিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল এ বাজারেই।

চলতি মার্চ মাসের ১২ দিনের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে আট দিন লেনদেন হয়েছে। এই সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে সাত হাজার ৯৪৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ১ মার্চ ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল চার লাখ সাত হাজার ৮৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গতকাল সোমবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার ৯০২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আট কার্যদিবসে প্রতিদিনই গড়ে এক হাজার কোটি টাকা করে বাজার মূলধন কমেছে।

চলতি মাসের গত রবি ও সোমবার পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। এই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ছয় হাজার ৩৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রবিবার এই মূলধন দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় চার লাখ তিন হাজার ৫৪৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর সোমবার এই মূলধন তিন হাজার ৬৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কমেছে।