dse dorpotonআলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। বর্তমান বাজারে আস্থা সঙ্কট প্রকট আকারে থাকায় তারল্য সংকটে হাহাকার করছে। ফলে নির্বাচনী বছর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই মুহুর্তে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে না পারলে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য বিড়াম্বিত হবে। তাছাড়া পুঁজিবাজার ইস্যুতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিওে বাস্তবে আলোর মুখ দেখছে না।

এতে দু:চিন্তায় পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত দুই দিন ধরে ডিএসইতে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ, মানববন্ধন অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গণে পুঁজিবাজার ইস্যুতে তুলকালাম, দায়িত্বশীলদের সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। তেমনি পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিও বিপাকে পড়েছে। তাই পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরানোই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২০১০ অর্থবছরের শেষ এবং ২০১১ অর্থবছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যাপক দরপতন হয়। মধ্যখানে কিছুদিন ভালো অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে আবার চলছে অস্থিরতা। ক্রমান্বয়ে কমছে লেনদেনের পরিমাণ। লেনদেন বর্তমান ৩শত কোটি টাকার নিচে চলে আসছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন কম হওয়ার নেপথ্যে তারল্য সংকট প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ তারল্য সংকট কাটাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রধান উৎস হলেও বাজারে তাদের তেমন অবদান লক্ষ্য করা যায়নি।

তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বলেছেন ভিন্ন কথা তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভয়ের কারনে তারা বিনিয়োগ করতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয় হলে পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ করতে কোন সমস্যা নেই।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী প্রভাষক হোসাইন আলী কাজী মতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ফান্ড থাকার পরও এক্সপোজারের কারণে তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয় হলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবো।

ডিবিএ মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকট থাকলেও পুঁজিবাজারে এই সমস্যাটি তেমন নেই। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে যতেষ্ঠ তারল্য থাকার পরও তারা বাংলাদেশ ব্যাংককের ভয়েই বিনিয়োগ করছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু বিষয়ে নমনীয় হলেই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এক্ষেত্রে সরকারের ভুমিকা নিতে হবে।

এ সময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে; সেগুলো সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে এক্সপোজারের সমস্যা। এছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে কস্ট প্রাইসে এক্সপোজার বিবেচনা, একই বিনিয়োগ দৈত গণনা, বন্ডে বিনিয়োগকে এক্সপোজারের বাইরে দেখা।

বাজারের বর্তমান অবস্থা এবং সরকারি পদক্ষেপের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম বাকী খলিলী জানান, ব্যবস্থাপনাটাই এখন হ-য-ব-র-ল। সরকারের উচিত ছিল বাজার নিযন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসির সাথে আলোচনা করেই বিভিন্ন সিদ্ধান নেয়া। কিন্ত তা করা হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পারছি না।

এ ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকলেও এসব বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাওয়ার কোনোই অর্থ হয়না। এখানে সরকারের সমন্বয়ের অভাব আছে, যেমনটি আছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে। সরকারের কাছে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এই পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসনের কার্যক্রম হাস্যকর। বাজারকে স্বাভাবিক করতে সমন্বয় জরুরি।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের ব্যাপারে একটা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়। আর এটা যাতে করতে না পারে সে জন্যই বিএসইসি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা সে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে চরম আস্থার সঙ্কট, যার কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বা মার্কেট মেকাররা বাজারে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা বিনিয়োগ খোয়াতে চান না।

তিনি বলেন, দু-একটা জিনিস দিয়ে এই বাজারের ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। শুধু স্পন্সর ডিরেক্টরদের দিয়ে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না। এ জন্য আইসিবির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনতে হবে। তাদের বিনিয়োগ আবার বাজারে আনতে হবে। তারা এখন চরম ভয়ে আছে। সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা তারা বাজারে বিনিয়োগ করে খোয়াতে চায় না। তাই বাজার স্থিতিশীল করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।