dse investমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট মুখ্য বিষয় নয়, বাংলাদেশের ব্যাংকের আন্তরিকতার কারনে বাজারের হযবরল অবস্থা। এ অবস্থা থেকে উত্তরন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে নমনীয় হতে হবে। পুঁজিবাজার ইস্যুতে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিএসইসি ডিএসইসির সহযোহিতা নিয়ে নিতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবো বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আজ ডিএসই কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা একই সুরে এসব কথা বলেন।

এছাড়া পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণ হচ্ছে তারল্য সংকট। এ বাজারে তারল্য সংকটের জন্য একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে আমাদের পুঁজিবাজারে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আরও অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তার জন্য পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। বাজারের প্রতি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজারের গতি ও আস্থা বাড়াতে দুটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক তার অধীন ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের পদ্ধতি নমনীয় করতে পারে।

বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্রোকারহাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন এবং তালিকা বহির্বাভূত কোম্পানিতে করা বিনিয়োগ বাদ দেওয়া হলে ব্যাংকগুলো বাজারে আরও বেশী বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে বাজার ফের তার গতি ফিরে পাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা আরও বাড়াতে হবে।

সাম্প্রতিক বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, যে কোনো দেশের পুঁজিবাজারের সাথে সে দেশের জিডিপির ইতিবাচক সম্পর্ক থাকে। অন্যান্য দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। তাই এখনও এই বাজারের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন করা সম্ভব।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের তারল্য বুঝে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকির বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। বাজারের পরিধি বৃদ্ধি করতে সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আসার প্রয়োজন রয়েছে। এক সময় ২২টি কোম্পানিকে বাজারে আনার প্রচেষ্টা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি।

ডিবিএ’র সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংককের কারণেই হচ্ছে। কারণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক বড় বিনিয়োগকারীদের থেকে যে সাপোর্ট আমরা পেতাম; সেটা এবার পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষ্ক্রিয়তা ও অসহযোগিতার কারনে পুঁজাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। ব্যাংক এক্সপ্রোজার লিমিট, বাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ আনুপাতের ( এডিআর রেশিও) জটিলতা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ডিবিএ সভাপতি আরো বলেন, বারবার বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি এক্সপ্লোজার লিমিট কস্ট প্রাইজের (ক্রয় মূল্য) ভিত্তিতে গননা করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কেট প্রাইজের ভিত্তিতে তা গননা করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোন শেয়ারকে এক্সপ্লোজারের আওতায় গননা করছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়শনের সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারে ফান্ডের সংকট রয়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা চেষ্টা করলেও বাজারে পজেটিভ ট্রেন ফিরিয়ে আনতে পারছে না। এমনকি পুঁজিরবাজারে সবচেয়ে বেশি পজেটিভ অবস্থানে রাখা প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারকে টেনে থুলতে পারছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জেগে ঘুমাচ্ছে। দেশের অর্থমন্ত্রী নিজেও বাংলাদেশ ব্যাংককে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহযোগিতায় করার জন্য বলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা করছে না।

নাসির উদ্দিন আরো বলেন, দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তারা তাদের সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে তাহলে পুঁজিবাজার অনেকটাই ইতিবাচক অবস্থায় উঠে আসবে। সরকারী ব্যাংকগুলো ফান্ডের মাধ্যমে যাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ায় এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের এগিয়ে আশার জন্য আহবান করে এ জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।