dse-strategic-partnerফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে ডিএসই কৌশলগত পার্টনার ইস্যুতে চলতি সপ্তাহে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) উভয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাদের এই মন কষাকষির পর্ব। বিএসইসি ও ডিএসইর এধরনের আচরনে বিনিয়াগকারীরা রয়েছে চরম বিপাকে।

ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার জন্য ভারতের কনসোর্টিয়ামকে পছন্দ করেছে বিএসইসি। এ পছন্দের বিষয়ে লিখিত কোন চিঠি ডিএসইকে দেয়নি বিএসইসি। তবে মৌখিবভাবে বিএসইসি কয়েকবার ডিএসইকে অনানুষ্ঠানিকভাবে আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন। সেই ইঙ্গিত কর্ণপাত করেনি ডিএসই কর্তৃপক্ষ। কারন এটি রাখতে হলে ডিএসইকে লোকসান গুনতে হবে ৬১৫ কোটি টাকা।

তাছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়ে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। বর্ধিত সময়ের শেষ দিনে অর্থাৎ গত বুধবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) কমিশনে এ প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এদিকে, চলতি সপ্তাহে কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবে কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে আপত্তি ও ডিএসইর জবাব পর্যালোচনায় এ সময় নেয়া হয়েছিল। আর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দেয়া সময়সীমা শেষ হয় গত ৮ মার্চ। আর বিএসইসির প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই জানিয়েছে, অত্যন্ত ১৩টি শর্ত থেকে চীনা কনসোর্টিয়াম সরে এসেছে।

লিখিত জবাবে চীনা কনসোর্টিয়ামের শর্ত শিথিলতার বিষয়ে জানিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটি। তবে ব্যাখ্যা দেয়ার পরিবর্তে শর্তে শিথিলতা কেন, এমন প্রশ্নসহ ডিএসইর কাছে আরো তিনটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। এসবের জবাব পেতেই ৫ দিনের বাড়তি সময় নিয়েছিল কমিটি। আর শেষ বাড়তি সময়ের শেষ দিনেই প্রতিবেদন জমা দিলো কমিটি।

উল্লেখ্য, এর আগে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ডিএসইর কাছে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবের খুঁটিনাটি যেসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল স্থানীয় আইনের পরিবর্তে যুক্তরাজ্যের আইনে বিনিয়োগ চুক্তি সম্পাদন ও ভবিষ্যতে এ-সংক্রান্ত বিবাদ হলে তা লন্ডনের সালিশি আদালতে মীমাংসার শর্ত।

এর মধ্যে প্রথম অংশটিতে শিথিলতা প্রদর্শন করে বাংলাদেশের স্থানীয় আইনে বিনিয়োগ চুক্তি সম্পাদনে প্রাথমিক সম্মতির কথা জানিয়েছেন কনসোর্টিয়াম-সংশ্লিষ্টরা। তবে তৃতীয় কোনো দেশের সালিশি আদালতের আবশ্যকতা রয়ে গেছে।

এর বাইরে প্রায় এক ডজন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কৌশলগত অংশীদারের লিখিত সম্মতির পর তা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপনের শর্তেও কিছু শিথিলতা দেখিয়েছে কনসোর্টিয়াম। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ বা বিনিয়োগ এবং একই অংশের বেশি মূল্যের চুক্তি সম্পাদন অন্যতম। এ সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে চীনারা।

এছাড়া ডিএসইর পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তনে চীনাদের অনুমতি গ্রহণ, নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্তি, ডিএসইর আইপিও-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, ১৫ শতাংশের বেশি কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আর্টিকেল যা-ই থাকুক চীনাদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ, অন্য যেকোনো কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়ে হস্তক্ষেপসহ সেটলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ডে অবদান থেকে অব্যাহতির শর্ত অন্যতম।

এছাড়া চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব করা ৩৭১ কোটি টাকার বিনামূল্যের কারিগরি সহায়তা প্যাকেজের ভ্যালুয়েশন নিয়ে প্রশ্ন করেছিল বিএসইসির কমিটি। এ বিষয়ে ডিএসইর বক্তব্য, এ সহায়তা প্যাকেজ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রস্তাব করায় এর কোনো স্বতন্ত্র ভ্যালুয়েশন করেনি তারা। তবে নিয়ন্ত্রকরা চাইলে এটি করা সম্ভব।

এদিকে চীনা কনসোর্টিয়াম তাদের অনেক শর্ত থেকে সরে আসায় এ বিষয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে বিএসইসি। ডিএসইর কাছে পাঠানো নতুন ব্যাখ্যাপত্রে কমিশন বলছে, আগে না তুলে বিএসইসি ব্যাখ্যা চাওয়ার পর ডিএসই এসব শর্ত উঠাল কেন?

দ্বিতীয় প্রশ্নে কমিশন বলছে, ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে গিয়ে চীনাদের নানা শর্ত মেনে নিয়ে ৭৫ শতাংশ স্থানীয় বিনিয়োগকারীর স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার কারণ কী? ২২ টাকা করে চীনাদের কাছে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাবের কথা বলা হলেও তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, লভ্যাংশ বিতরণের পর এ দর সমপরিমাণ কমে যেতে পারে। এটি কি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের জানানো হয়েছে?

এর বাইরে কমিশন বলছে, ডিএসইর পর্ষদ চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবটি বিএসইসিতে পাঠানোর সময় বলেছে, তাদের সব শর্তই আইনসম্মত। আইনবিরোধী অনেক শর্ত থাকার পরও ডিএসই পর্ষদ কেন এমনটি সার্টিফাই করল? আর ডিএসইর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবের প্রাথমিক অবস্থা থেকে চূড়ান্ত বিনিয়োগ চুক্তি পর্যন্ত পৌঁছার মধ্যবর্তী সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে অনেক দরকষাকষি ও সমঝোতার সুযোগ আছে।

নিয়ন্ত্রকরা চাইলে এর ভিত্তিতে শর্ত সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সম্ভব। প্রতিটি পরিবর্তনই ডিএসইর জন্য ইতিবাচক। ডিএসই এখন মূলত স্টক এক্সচেঞ্জের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থরক্ষা ও সম্ভাব্য পরিচালন জটিলতা এড়াতে চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে দরকষাকষি করছে।