dse-strategic-partnerদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসির গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার (১৯ মার্চ) কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে বিএসইসির এক জুরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমান অবস্থায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার প্রস্তাব নাকচ করলেও ডিএসইকে সংশোধিত প্রস্তাব দাখিল করার সুযোগ দিয়েছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে ৫টি শর্ত দিয়েছে।

০১। শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টে এমন কোনো শর্ত থাকা যাবে না যা ভূমি আইন, ডিএসই’র সাধারণ শেয়ারহোল্ডার এবং বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়নে কোনো সাংঘর্ষিকতা তৈরি হয়।

০২। তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রস্তাব যা পরিপালন করতে ডিএসই’র বিদ্যমান মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন সংশোধন করতে হয় তা রাখা যাবে না।

০৩। শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টসহ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর প্রস্তাব কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে।

০৪। চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী সংক্রান্ত বিএসইসির গঠিত কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন ডিএসই জেনারেল মিটিংয়ে উপস্থাপন করবে।

০৫। ডিএসই তাদের জেনারেল মিটিংয়ের মিনিটসসহ, সংশোধিত শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টসহ অন্যান্যা দলিলাদি নিয়ে কমিশনে চীনা কনসোর্টিয়ামের বিষয়ে চূড়ান্ত আবেদন করবে।

উল্লেখ্য, চীনের কনসোর্টিয়ামের অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তনের আগে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারীর লিখিত অনুমোদন লাগবে। এছাড়া ১৫ শতাংশের অধিক যে কোন স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ, যেকোন ১০ কোটি টাকার উপরে চুক্তি, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর স্বার্থ জড়িত যে কোন ইস্যু, যেকোন ধরনের ইনটেলেকচ্যুয়াল সম্পত্তি অর্জন,

চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারী তার ইচ্ছা অনুযায়ি যে কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগদানের প্রস্তাব, সেটেলম্যান্ট গ্যারান্টি ফান্ড কন্টিবিউশন বাদ বা স্থগিত করতে হবে এবং ডিএসইর আইপিও সংক্রান্ত যে কোন ইস্যু যেমন, শেয়ারের মূল্য নির্ধারন, স্পন্সর নির্ধারন, অবলেখক নিয়োগ,প্রসপেক্টাস অনুমোদন ও ইস্যু মূল্য নির্ধারনের আগে লিখিত অনুমোদন নেওয়ার শর্ত দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম।

এছাড়া আর্টিকেল ১৩৫ অনুযায়ি ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারনকারীর সঙ্গে ডিএসই চুক্তি করতে না পারার আইনটি থেকে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারীকে অব্যাহতি দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। আর এইসব শর্তগুলোকে ডিএসইর আর্টিকেল পরিবর্তন করে সংযোজন করতে হবে।

এছাড়া চীনের কনসোর্টিয়াম যে ৩০০ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা দেবে বলে ডিএসই দাবি করছে, তা নির্ধারণে কোন নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই বলে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। আর ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডিএসইর সেক্রেটারি মো. আসাদুর রহমান বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেয়।

এর আলোকে একইদিনে ডিএসইর প্রস্তাব যাছাই-বাছাইয়ের জন্য বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহবায়ক ও নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলমকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের কমিটি করে বিএসইসি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নির্বাহী পরিচালক ড.এটিএম তারিকুজ্জামান ও নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

ডিএসইর প্রস্তাব যাছাই-বাছাইয়ে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি চীনা কনসোর্টিয়ামের কিছু শর্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিএসইকে লিখিতভাবে জানায় বিএসইসি। এরই আলোকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ ৪ মার্চ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে সেই ব্যাখ্যায় বিএসইসি সন্তুষ্ট হতে পারেনি।