icb-logoমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের স্বার্থে ৫টি মূলনীতি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হলেও সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে আইসিবিতে তারল্য সংকট প্রকট আকারে দেখা দেওয়ার ঠিক মতো পুঁজিবাজারকে সার্পেট দিতে পারছেন না। ফলে সাম্প্রতিক দরপতন বাজারে আইসিবির ভুমিকা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে একক গ্রাহক ঋণ সীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) এর কারণে অর্থ সঙ্কটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ জন্য কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে না। তাই অর্থ সঙ্কট কাটাতে দীর্ঘ মেয়াদি বন্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায় আইসিবি’র পরিচালনা পর্ষদ।

আইসিবি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্ড ছাড়ার বিষয়টি দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে বন্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট অনুযায়ী কোন ব্যাংক তার পরিশোধিত মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি একক কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবে না।

দেশের শেয়ারবাজারে একাধিকবার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলেও পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইসিবির ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। বিশেষ করে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম দায়িত্ব হলেও দীর্ঘ আট বছরেরও অধিক সময় ধরে সঙ্কট উত্তরণে আইসিবির তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।

আর আইসিবি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করলে সম্প্রতি পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। প্রতি অর্থবছরে ঈর্ষণীয় মুনাফা করলেও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, আইসিবির ৫টি মূলনীতির মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, সঞ্চয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মূলনীতির কোনোটাই যথাযথ পালন করে না আইসিবি। যদি নিয়মানুযায়ী আইসিবি কর্তৃপক্ষ কর্মকান্ড পরিচালনা করত তবে বাজারে কোনোভাবেই এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। সম্প্রতি আইসিবির শেয়ার বিক্রির কারনে বাজারে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়ার বিশেষ উদ্দেশ্যে আইসিবি গঠন হয়েছিল। এতোদিন সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট আইসিবি’র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে যত খুশি ঋণ নিতে পারতো আইসিবি। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনার মাধ্যমে আইসিবি-কে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিটের আওতায় নিয়ে আসে।

এতে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ ১৫ শতাংশের বেশি ছিল আইসিবি-তে তাদের টাকা পরিশোধ করে সমন্বয় করতে হয়েছিল। পরিণতিতে পুঁজিবাজারে সেল প্রেশার বেড়ে যায় এবং সূচকের বড় পতন ঘটে।

আইসিবি’র কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্দেশনার পূর্বে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক আইসিবি-তে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেছে। নির্দেশনার কারণে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট সমন্বয়ের জন্য শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকগুলোকে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

এই সময় আইসিবি প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। বর্তমানে একক গ্রাহকে এক্সপোজার লিমিটের কারণে বড় কোন ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুঁজিবাজারের সঙ্কটকালে আইসিবি বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ কারণে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে গত বৃহষ্পতিবার ডিবিএ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলনে আইসিবি’র ক্ষেত্রে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিটের কড়াকড়ি তুলে দেওয়ার দাবী জানানো হয়েছে। বিষয়টির সমাধানে অর্থমন্ত্রীর কাছেও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, আইসিবি গঠন করা হয়েছে পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসিবি-কে দুর্বল করছে। এতে পুঁজিবাজারের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী।

আইসিবি’র ওই কর্মকর্তা বলেন, আইসিবি’র ক্ষেত্রে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয় সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি করা হলে আইসিবি’র তারল্য প্রবাহ বেড়ে যাবে। তারপরও আইসিবি নিজের ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য বন্ড ইস্যু করার বিষয়ে অগ্রসর হবে।