titas-jugantor_35217_1483005571দেশ প্রতিক্ষণ,ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের গ্যাস বিক্রি থেকে প্রতিবছরই আয় বাড়ছে। তবে বিতরণ মার্জিন কমে যাওয়া ও গ্যাস ক্রয়ের ওপর আয়কর ও ভ্যাটের কারণে নিট মুনাফায় উল্টো রথে চলছে কোম্পানিটি। আর এবার বিতরণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো পরিচালন লোকসানের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তিতাস গ্যাসের ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে। যদিও আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা ছিল ১০৮ কোটি টাকা। স¤প্রতি প্রকাশিত কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় গ্যাস বিক্রি থেকে তিতাসের আয় হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। তবে এ সময় গ্যাস বিতরণে কোম্পানির ব্যয় ৯৩ শতাংশ থেকে ৯৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ কারণে বিক্রি বাড়লেও মোট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

২০১৬-১৭ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তিতাস গ্যাসের মোট মুনাফা ছিল ২২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর বিক্রি বাড়ার পরও শুধু বিতরণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে মোট মুনাফা নেমে আসে ১০৮ কোটি টাকা। এতে এক বছরের ব্যবধানে মোট মুনাফা কমেছে ৫১ শতাংশ। এ সময় প্রশাসনিক ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে প্রশাসনিক ব্যয় দাঁড়ায় ১৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। মোট মুনাফার তুলনায় প্রশাসনিক ব্যয় বেশি হওয়ায় পরিচালন লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি। এ সময় কোম্পানিটি ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পরিচালন লোকসানে পড়ে। অবশ্য স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদ আয়ে শেষ পর্যন্ত নিট মুনাফায় রয়েছে তিতাস গ্যাস।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে স্থায়ী আমানত ও অন্যান্য বিনিয়োগ থেকে তিতাস গ্যাসের সুদ আয় হয়েছে ১২৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৪ কোটি টাকা। স্থায়ী আমানত ও বিনিয়োগ থেকে আয়ের কারণে সর্বশেষ প্রান্তিকে তিতাস গ্যাসের ৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ কম। আর চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) তিতাসের নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩২ কোটি টাকা।

সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি, সার কারখানা, শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি ও আবাসিক-অনাবাসিকসহ সব খাতে পাঁচ বছরে তিতাসের গ্যাস বিতরণ ও রেভিনিউ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে তিতাসের মোট গ্রাহক ছিল ২০ লাখ ২৩ হাজার, যা পরের বছর ২৭ লাখ ৩৪ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

২০১২-১৩ হিসাব বছরে গ্রাহক ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার। গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির রেভিনিউ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ২০১২-১৩ হিসাব বছরে মোট রেভিনিউ ছিল ৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে তা ১২ হাজার ৫৫১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। পাঁচ বছরে কোম্পানিটির রেভিনিউ ধারাবাহিক ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও নানা কারণে মুনাফা উল্টো কমে গেছে।

২০১১-১২ হিসাব বছরে তিতাসের কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৮৯০ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ৭২৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নেমে যায়। আর ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে নিট মুনাফা আরো কমে ৫০৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। চলতি হিসাব বছরে মুনাফা আরো কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাবে চলতি হিসাব বছরে মুনাফা হতে পারে ৩৩১ কোটি টাকা। মূলত কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, গ্যাস ক্রয়ে আয়কর ও ভ্যাট আরোপ ছাড়াও সরকার কর্তৃক গ্যাস বিতরণ চার্জের ফি কমিয়ে দেওয়ায় মুনাফার ওপর এ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কোম্পানিটির।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, তিতাসের আয়ের ৬০ শতাংশ আসে বিতরণ চার্জ থেকে। ২০১৫ সালের আগস্টে ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্য ও তিতাস গ্যাসের বিতরণ চার্জ পুনর্নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একই সঙ্গে তিতাসকে বিতরণ চার্জ বাবদ প্রাপ্ত আয় আলাদা হিসাবে নেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিইআরসি।

বিতরণ চার্জ থেকে প্রাপ্ত আয় কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাবে না নেওয়ারও নির্দেশ দেয় দেশের জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফলে কোম্পানির রাজস্বের প্রধান উৎসই আলাদা হিসাবে চলে যায়, যার প্রভাব পড়ে নিট মুনাফায়। সর্বশেষ হিসাব বছরেও এই খাতে বড় ধরনের মুনাফা হারায় কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, আগের হিসাবে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রিতে তিতাস গ্যাসের আয় হতো ৯৭ পয়সা। এর মধ্যে ৫৫ পয়সা আসত বিতরণ চার্জ থেকে। আর গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ, সুদ ও বিবিধ আয় থেকে আসত বাকি ৪২ পয়সা। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশে বিতরণ চার্জ ৫৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ২৯ পয়সায় নামিয়ে দেয় বিইআরসি।

কমানোর যুক্তি হিসেবে তারা জানায়, তিতাস গ্যাসের বিতরণ রাজস্ব চাহিদা মেটাতে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ২৯ পয়সা প্রয়োজন হয়। আর বিদ্যমান অন্যান্য আয় (গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ, সুদ ও বিবিধ আয়) বাবদ ৪২ পয়সা প্রাপ্তি বিবেচনায় তিতাস গ্যাস কোম্পানির বিতরণ চার্জ বাবদ আর কোনো আয়ের প্রয়োজনই হয় না। তবে বিষয়টি ভিন্ন মত দিয়ে চার্জ পুনর্নির্ধারণে বিইআরসির কাছে তিতাস একটি আবেদনপত্র দিলেও আড়াই বছরে কোনো সুরাহা হয়নি।