stylecraft deshprotikhonআলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি স্টাইল ক্রাফটের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। স্বল্পমুলধনী কোম্পানি হওয়ার একটি চক্র নতুন করে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে মেতে উঠছেন। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক পরিস্থিতি শুরু হতে না হতে স্টাইল ক্রাফটের শেয়ার নিয়ে নতুন করে কারসাজিতে মেতে উঠছেন। হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়া এ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়া অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এছাড়া দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ার নিয়ে হরহামেশা কারসাজি চলছে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। তবে স্টাইল ক্রাফট লিমিটেডের সাম্প্রতিক শেয়ার লেনদেন ও দরবৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে এ তদন্ত করবে ডিএসই। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় সন্দেহজনক প্রবণতা পরিলক্ষিত হওয়ায় এ নির্দেশ দেয় কমিশন। ডিএসইর কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে।

বিএসইসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানিয়েছেন, কমিশনের কাছে স্টাইল ক্রাফটের লেনদেন ও দরবৃদ্ধির বিষয়টি সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। এজন্য বিষয়টি তদন্ত করে ডিএসইকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ডিএসইতে স্টাইল ক্রাফটের সাম্প্রতিক শেয়ার লেনদেন ও দরচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক মাসে শেয়ারটির দর একতৃতীয়াংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে ১৫ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১ হাজার ৩৬৩ টাকা ৭০ পয়সা। এর পর থেকেই ক্রমাগত শেয়ারটির দর বাড়তে থাকে এবং ১৫ এপ্রিল ১ হাজার ৮৫৬ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়।

২১ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। একইভাবে ১৫ মার্চের আগে প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির চার হাজার শেয়ার লেনদেন হলেও এর পর থেকেই হঠাৎ করে শেয়ার লেনদেন পরিমাণ বেড়ে যায়। একই সময়ে হাওলাও বেড়েছে। স্বল্প মূলধনি হওয়ায় লভ্যাংশ ঘোষণার আগের সময়গুলোয়ও অল্প সময়ে শেয়ারটির দর অনেক বেশি বেড়ে যেতে দেখা যায়।

বিএসইসি মনে করছে, স্টাইল ক্রাফটের পর্ষদ সভায় ব্যবসা সম্প্রসারন সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে থেকেই কোম্পানির শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টি সন্দেহজনক। এক্ষেত্রে কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সম্পর্কে পর্ষদ সভার আগেই অবগত হয়ে কেউ শেয়ার লেনদেন করেছেন কিনা, সেটা যাচাই করা প্রয়োজন।

পর্ষদ সভার আগে ইনসাইডারদের শেয়ার লেনদেনের কিছু ঘটনাও কমিশনের নজরে এসেছে বলে জানা গেছে। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিশন। এজন্য ডিএসইকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।

এদিকে কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে গত ২৫ মার্চ নোটিস পাঠানো হয়। ডিএসই নোটিস পাঠানোর তিনদিন পর ২৮ মার্চ বিকাল ৪টা ৫৩ মিনিটে দরবৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানায় কোম্পানিটি। এর আগে একই দিন বেলা ৩টায় অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় অ্যাকর্ডের পরামর্শ অনুসারে স্টাইল ক্রাফটের কারখানা ভবন সংস্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

পাশাপাশি বিদ্যমান ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ শতাংশ বাড়ায় কারখানায় ছয়টি নতুন উৎপাদন লাইন স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খুলতে পূবালী ব্যাংকের কাছে পাঁচ বছর মেয়াদে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করারও সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানির পর্ষদ।

stylecraft pডিএসই সূত্রে জানা গেছে, মার্চের ২৫ তারিখ পর্যন্ত স্টাইল ক্রাফটের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছিল না বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পরবর্তীতে মার্চের ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত ও দরবৃদ্ধির নোটিসের জবাব একসঙ্গে পাঠানো হয়।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানির কাছে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও ২৮ তারিখে এসে কারখানার ভবন সংস্কার, উৎপাদন লাইন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করার ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক। কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আগেই অবগত ছিলেন। কারণ হুট করে ডিএসইর নোটিস পাওয়ার তিনদিনের মধ্যেই কোম্পানি ব্যবসা স¤প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

একই সঙ্গে পর্ষদ সভার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন ও দরবৃদ্ধির বিষয়টিও যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে। এ বিষয়ে ডিএসই ও বিএসইসিকে তদন্ত করে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে এক প্রকার জুয়া খেলা (গ্যাম্বলিং) চলছে। তবে এবার ছোট বাজারে ছোট আকারে হচ্ছে। যে সব কোম্পানির দাম বাড়ার কথা, সে সব কোম্পানির দাম না বেড়ে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দাম বেড়েই চলছে।

কয়েক দিন ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তিনি আরও বলেন, যে সব কোম্পানি সার্কিট ব্রেকারে পৌঁছেছে, তাদের দাম এত বেশি বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে এসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে বিভিন্ন গুজব রয়েছে বলে জানান তিনি। আর কিছু কিছু বিনিয়োগকারী গুজব শুনে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহবান জানান তিনি।

বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এ সম্পর্কে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় রুপ নিতে না নিতে স্বল্প মূলধনী কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর তর তর করে বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখানে কারসাজি হচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা ধরতে পারছে না। তিনি বলেন, এ ধরনের কারসাজি বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি আরো জোরদার করতে হবে। ডিএসই, সিএসইকেও তৎপর হতে হবে। তবে এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।