bsccl lagoমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে দেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বাণিজ্য ছিল একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) হাতে। তবে ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল টেরিসট্রিয়াল কেবলস (আইটিসি) সেবা প্রদানকারী ছয় কোম্পানিকে ব্যান্ডউইথ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে ধীরে ধীরে বিকল্প ব্যবস্থাতেই আগ্রহী হয়ে ওঠে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এতে ছয় আইটিসি অপারেটরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে বিএসসিসিএলকে। সময়ের ব্যবধানে বেসরকারি এসব কোম্পানির হাতে চলে গেছে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বাণিজ্য। তাই সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে পিছিয়ে পড়েছে কোম্পানিটি। ঘুরে দাঁড়াতে ব্যান্ডউইথ রফতানি-লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবলস সংযোগ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিএসসিসিএল। ২০০৮ সালে এটি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

page 1এদিকে ৬৬০ কোটি টাকার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল প্রকল্প বাস্তবায়নে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) থেকে ৩২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। মূলত এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়েই কোম্পানিটির নিট মুনাফায় ধস নেমেছে।

বিক্রি ও পরিচালন মুনাফা যথেষ্ট বাড়লেও চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বিএসসিসিএলের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ কমে গেছে। জুলাই-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি মাত্র ১৪ পয়সা মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়েছে সরকারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৭ পয়সা।

বিএসসিসিএলের কোম্পানি সচিব মো. আবদুস সালাম খান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন প্রকল্পের জন্য আইডিবি থেকে নেয়া ৩২৮ কোটি টাকার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে কোম্পানিকে। এতে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় বেড়ে গেছে।
চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে এ খাতে কোনো খরচই ছিল না। মূলত এ কারণেই বিক্রি ও পরিচালন মুনাফা বাড়ার পরও কোম্পানির নিট মুনাফা কমে গেছে।

page 2 pataসর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) বিএসসিসিএলের বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৭ লাখ টাকা বা প্রায় ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১০২ কোটি ১৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে আইপিএলসি ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে ৬৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা।

আইপি ট্রানজিট সার্ভিস থেকে এসেছে ২৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সার্কিট অ্যাক্টিভিশন ও কো-লোকেশন চার্জ বাবদ চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে কোম্পানিটির। গত বছরের একই সময়ে এ খাত থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় হয়েছিল।

ভারত সঞ্চার নিগমের কাছে আইপি ট্রানজিট সার্ভিস রফতানি বাবদ আয় হয়েছে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রাপ্ত রাজস্বের বিপরীতে কোম্পানির প্রত্যক্ষ পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে ৫৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা গ্রস মুনাফা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। একই সময়ে পরিচালন খাতে ২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে কোম্পানিটির, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

শেষ পর্যন্ত প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে সুদ ও অন্যান্য আয় বাবদ ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে কোম্পানিটির। তবে আর্থিক ব্যয় বাবদ ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ হওয়া এবং শেয়ারে বিনিয়োগে ৩৯ লাখ টাকা লোকসানের কারণে অপরিচালন খাতে নিট ৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে কোম্পানিটির। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আয় হয়েছিল।

ফলে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কর পরিশোধের পর ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছে কোম্পানিটির, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭ পয়সা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৫ (এসইএ-এমই-ডবিøউই-৫)-এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিএসসিসিএল। গত বছরের মাঝামাঝি প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ১৬৬ কোটি ও বিএসসিসিএল নিজে ১৬৬ কোটি টাকা অর্থসংস্থান করেছে। বাকি ৩২৮ কোটি টাকা ঋণসহায়তা হিসেবে দেয় আইডিবি।