kader-modi deshprotikhonজয়নাল আবেদিন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসাধারণ সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।দিল্লিতে আ’লীগ নেতাদের নজিরবিহীন গুরুত্ব দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

দিল্লি সফররত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌজন্য সাক্ষাতের করেন। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও স্পষ্ট মতামত জানালেন মোদি। ফলে সৌজন্য সাক্ষাতের মোড়কে এই বৈঠক এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে মোদি এটাও স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তার সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন কার দিকে থাকবে।

তেমনি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ নেতারা। টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তিন দফা বিজয়ের মধ্য দিয়ে হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

দিল্লিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সম্মানে সোমবার রাতে বিজেপি আয়োজিত এক নৈশভোজে এ বার্তা দেন বিজেপি নেতারা। নৈশভোজে উপস্থিত একাধিক উচ্চপর্যায়ের সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সম্মানে বিজেপি গতরাতে একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আয়োজন করে ভারতের বাণিজ্য, শিল্প এবং এভিয়েশনমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর বাসভবনে।

নৈশভোজে বাংলাদেশ থেকে দিল্লি সফরে যাওয়া আওয়ামী লীগের ১৯ কেন্দ্রীয় নেতা এবং ভারতের বিজেপি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সুরেশ প্রভু, বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব এবং ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমজে আকবর আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।

তারা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের চোখেমুখে ব্যাপক সন্তুষ্টির ছাপ ফুটে ওঠে বলে উপস্থিত ওই সূত্রগুলো জানায়।

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দেশের ক্ষমতাসীনদের এমন আশাব্যঞ্জক বার্তাকে বেশ ইতিবাচকভাবে দেখেন আওয়ামী লীগের নেতারা। নৈশভোজে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের নেতা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন।

এদিকে, ভারত সফররত আওয়ামী লীগের একাধিক প্রতিনিধি, ভারত সরকার এবং বিজেপির নির্ভরযোগ্য সূত্র দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো তিন কারণে শেখ হাসিনার সরকারকেই ক্ষমতায় দেখতে চায় মোদি সরকার। প্রথম কারণটি হচ্ছে: প্রতিবেশি বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে এবং রাষ্ট্র নায়ক হিসাবে শেখ হাসিনার একক ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব। তার এই নেতৃত্বের কারণেই দুদেশ সমানভাবে উপকৃত হতে পারে।

দ্বিতীয় কারণ, বাংলাদেশে এ মুহুর্তে শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতা নেই। যার কর্মদক্ষতা ও সততার কারণে বিশ্বনেত্রী হিসাবে তিনি নিজেকে আসীন করেছেন। এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় দেখতে চায় ভারত সরকার। সর্বশেষ তৃতীয় কারণ হিসাবে যেটি সূত্র জানিয়েছে তা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসাবে বিএনপির ওপর ভারতীয় সরকারের বিশ্বাসহীনতা। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তা ভারতের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। এটা দেশটির সরকার বিশ্বাস করে।

চতুর্থত, আ’লীগ সরকারের প্রতি ভারতের পুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শেখ হাসিনার সরকার আবার ক্ষমতায় দরকার।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সময় সাড়ে চারটায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্য থেকে ৫ জন অংশ নেন। তারা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক।

aligঅপরদিকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৪০ মিনিট আওয়ামী লীগের ৫ সদস্যের প্রতিনিধির সাথে একান্তে বৈঠক করেন মোদী। এর আগে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং ফটোসেশনের অংশ নেন তিনি।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, তিস্তার পানিবণ্টসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে বর্তমান সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।

এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়ে আশাবাদ জানিয়ে মোদী বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমীমাংসিত প্রায় সকল ইস্যুর যেহেতু সমাধান হতে শুরু করেছে তাই তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে। মোদী এসময় তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া স্থল সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ও সমুদ্রসীমা বণ্টণের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, অচিরেই তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যার যাতে সমাধান হয় সেজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন আমাদেরকে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির আমন্ত্রণে গত রোববার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল দিল্লী পৌছায়। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলটির দেশে ফেরার কথা রয়েছে।