queensouth-deshprotikhonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লাভ-ক্ষতি, বার্ষিক লভ্যাংশ ঘোষণা বা ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিকল্পনা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কারসাজির চলছে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি সরকারকে ট্যাক্স ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়ার ভয়েই কোম্পানিগুলো এই কারসাজির আশ্রয় নেয় বলে অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিনিয়োগকারীর।

প্রান্তিক প্রতিবেদনে মুনাফা, সম্পদ মূল্য কিংবা ক্যাশ ফ্লোর উত্থান-পতন দেখা দিলে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোকে যথার্থ কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এরকম একটি নির্দেশনাও জারি করে।

কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেই আদেশের কোন তোয়ক্কাই করছে না। নিজেদের খেয়াল-খুশী মতো কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষ প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

সম্প্রতি প্রকাশিত প্রান্তিক প্রতিবেদনে কোনো কোনো কোম্পানির মুনাফা, সম্পদ মূল্য এবং ক্যাশ ফ্লো উত্থান-পতন হয়েছে। কিন্তু এ পরিবর্তনের কোনো ব্যাখ্যা কোম্পানিগুলো দেয়নি। কেন কোম্পানির আয় কমে গেলো, কেন ক্যাশ ফ্লোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লো কিংবা কেনইবা সম্পদ মূ‌ল্যে পরিবর্তন হলো-এর কারণ বিনিয়োগকারীদের জানার আগ্রহ থাকলেও কোম্পানিগুলো স্বেচ্ছাচারিতার পথ অবলম্বন করছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা, সম্পদ মূল্য কিংবা ক্যাশ ফ্লোর উত্থান-পতনের কারণ জানার আইনগত অধিকার রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। কারণ তারাও কোম্পানির অংশীদার। কিন্তু কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিনিয়োগকারীরা সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার আদেশে প্রান্তিক প্রতিবেদনে কি পরিমান পরিবর্তন হলে বা কত শতাংশ পরিবর্তন হলে কোম্পানিগুলোকে ব্যাখ্যা দিতে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। সে কারণে কোম্পানিগুলো মুনাফা, সম্পদ মূল্য কিংবা ক্যাশ ফ্লো প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিচ্ছে এবং এ কারণে কোম্পানিগুলোকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

তেমনি পুঁজিবাজারে আসার আগে অব্যাহত মুনাফা দেখিয়েছে সদ্য তালিকাভূক্ত বস্ত্রখাতের কোম্পানি কুইন সাউথ টেক্সটাইল লিমিটেড। কিন্তু পুঁজিবাজারে এসে প্রথম প্রান্তিকেই মুনাফা কমেছে কোম্পানিটির । কোম্পানিটির প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.২৭ টাকা। অথচ পুঁজিবাজারে আসার আগে গত অর্থবছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৪৮ টাকা।

এদিকে, পুঁজিবাজারে আসার পর কোম্পানিটির সম্পদ মূল্যও কমেছে। পুঁজিবাজারে আসার আগে ডিসেম্বর ২০১৭ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ছিল ১৮.০৭ টাকা। পুঁজিবাজারে আসার পর মার্ছ ২০১৮ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.১০ টাকায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটি যে দুর্বল প্রকৃতির তা প্রথম প্রান্তিকের আয় দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তাঁরা দায়ী করছেন। তাঁরা অভিযোগ করছেন, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রমাগত দুর্বল প্রকৃতির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে আসে কুইন সাউথ টেক্সটাইল। অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।

আইপিও অর্থে কোম্পানিটির স্বয়ংক্রিয় ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, নতুন ম্যাশিনারিজ আমদানি, কারখানা আধুনিকায়ন, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিওর খরচ নির্বাহ করে।