BSEC-news-specialজ্যৈষ্ঠ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ বিধিমালা ২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রস্তাবিত খসড়া বিধিমালায় কোনো কোম্পানির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্থাৎ ১০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে এ-সম্পর্কিত তথ্য কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা-সংক্রান্ত ধারাটি বাদ দিয়েছে বিএসইসি।

বিদ্যমান আইনটিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ারধারণের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে শেয়ারের মালিকানার তথ্য প্রকাশে কমিশনের একটি নির্দেশনা বলবৎ থাকায় প্রস্তাবিত খসড়ায় ধারাটি বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

প্রস্তাবিত খসড়া পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদ্যমান বিধিমালার তুলনায় ২০১৮ সালের খসড়ায় আইনটির কলেবর অনেকাংশেই কমানো হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালায় পাঁচটি অধ্যায় ও ৩৪টি ধারা থাকলেও প্রস্তাবিত খসড়ায় চারটি অধ্যায় ও ১৮টি ধারা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত খসড়ায় শেয়ারের মালিকানা প্রকাশ-সংক্রান্ত দ্বিতীয় অধ্যায় এবং অনুসন্ধান, তদন্ত ও শাস্তি-সংক্রান্ত পঞ্চম অধ্যায়টি পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছে।

তাছাড়া খসড়ায় চতুর্থ অধ্যায়টি নতুন করে সংযোজিত হয়েছে, যেখানে বিদ্যমান বিধিমালার ৩৩ ধারায় থাকা ‘কমিশনের অব্যাহতি প্রদানের ক্ষমতা’ এবং নতুন বিধিমালা কার্যকর হওয়ার কারণে আগের বিধিমালাটি রহিতকরণ ও হেফাজত-সংক্রান্ত ধারাটি সংযুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত খসড়া বিধিমালাটি কার্যকর হলে এর আগের ২০০২ সালের সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালাটি রহিত হয়ে যাবে। তবে এ বিধিমালার অধীনে গৃহীত সব কার্যক্রম নতুন আইনের অধীনে কার্যকর হিসেবে গণ্য হবে।

আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএসইসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ-সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধিমালাটিকে প্রস্তাবিত খসড়ায় আরো সহজ করা হয়েছে। খসড়ায় শেয়ারের মালিকানা প্রকাশ ও অনুসন্ধান-সংক্রান্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাদ দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শেয়ারের মালিকানা প্রকাশ-সংক্রান্ত কমিশনের একটি নির্দেশনা রয়েছে। ফলে আলাদা করে আইনে এটি সংযুক্ত করার প্রয়োজন নেই। আর কমিশনের কাছে আইনানুগ ক্ষমতা থাকায় আলোচ্য আইনটিতে অনুসন্ধান-সংক্রান্ত বিধানটি বাদ দেয়া হলেও এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।

প্রস্তাবিত খসড়ায় একীভ‚তকরণের বিষয়ে কোনো বিধান সংযোজন না করার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আদালতের মাধ্যমে একীভ‚তকরণের বিষয়টি নিষ্পন্ন হওয়ায় এ নিয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আরো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত খসড়ায় এটি রাখা হয়নি।

প্রস্তাবিত খসড়া বিধিমালার প্রথম অধ্যায়ে সংজ্ঞার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিমালায় থাকা ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ ও ‘প্রস্তাবপত্র’ বাদ দিয়ে ‘শেয়ার’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিধিমালা প্রয়োগের পরিধি-সংক্রান্ত ধারায় নতুন করে মার্কেট মেকার, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও অনুমোদিত উপহারের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এ বিধিমালার কোনো বিধি প্রযোজ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া বিধিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনটি পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন বা অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে, যেখানে বিদ্যমান বিধিমালায় স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে এ দুই পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন বা অধিগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। খসড়ায় নতুন করে এ দুই পদ্ধতির পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের নেগোশিয়েটেড মার্কেটে নগদ অর্থের বিনিময়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তাছাড়া খসড়া বিধিমালায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকার কিংবা মার্চেন্ট ব্যাংকারের মাধ্যমে ঘোষণাপত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালায় শুধু মার্চেন্ট ব্যাংকারের মাধ্যমে এ ঘোষণাপত্র দাখিলের বিধান রয়েছে।

খসড়া বিধিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৯ ধারা অনুসারে ক্রয় প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাব গ্রহণ করা অধিগ্রহণকারী শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক শেয়ারের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ক্রয় প্রস্তাব সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালায় এক্ষেত্রে ক্রয় প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়সীমা চার সপ্তাহ নির্ধারিত রয়েছে।

একই অধ্যায়ের ১০ ধারার ২(ঙ) উপধারাটি নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে। এ উপধারা অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোনো সিকিউরিটিজের অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যদি এর বিক্রেতা খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে ক্রয় প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে।