Apex-Foods lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি এপেক্স ফুডস মালিকানা জটিলতায় পড়ছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইপিএস নিয়ে কারসাজি করায় শেয়ারহোল্ডারা সব শেয়ার কিনে নিচ্ছেন। ফলে শেয়ারহোল্ডারা এখন মালিকানা দাবি করছেন। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের ফ্রি ফ্লোট শেয়ার কিনে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা । এ সুযোগে মালিক পক্ষ ঘোষনা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করছেন। ফলে মালিক পক্ষের চেয়ে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বেশি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এপেক্স ফুড চলতি অর্থবছরে রফতানি বাড়ার পাশাপাশি উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় কমিয়ে যাওয়ায় মুনাফা বাড়ছে। এপেক্স ফুডের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়েছে ৪০ শতাংশ। কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ১.৩৯ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের ৯ মাসে হয়েছিল ০.৯৯ টাকা। এ হিসেবেইপিএস বেড়েছে ০.৪০ টাকা বা ৪০ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ১৮) ইপিএস হয়েছে ০.৫৮ টাকা। যার পরিমান আগের অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল ০.৩৫ টাকা। এ হিসেবে ইপিএস বাড়ছে ০.২৩ টাকা বা ৬৬ শতাংশ।

কোম্পানিটির চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাড়িঁয়েছে ১১৬.৭০ টাকা। কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের দাবি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যেহারে মুনাফা করে সে হারে ইপিএস প্রদান করেননি। কোম্পানিটির ডিপোজিট ৩৫  কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা হওয়া স্বত্বে ইপিএস হয়েছে ০.৫৮ টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইপিএস আসার কথা ৫ টাকার উপরে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারহোল্ডারা এজিএমে গিয়ে কোম্পানির অডিট প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকৃত ইপিএস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কোম্পানি র্কর্তপক্ষ কোন ভ্রক্ষোভ করছেন না। বরং এজিএমে দালাল পাটি দিয়ে পাশ পাশ বলে এজিএম শেষ করে ফেলে। সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা এপেক্স ফুডস কর্তৃপক্ষ শুনছে না।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এপেক্স ফুডস কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে। বছরের পর বছর ভালো মুনাফা করা স্বত্বে বিনিয়োগকারীদের নাম মাত্রা ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের টাকায় চললেও বিনিয়োগকারীদের বিষয় কোন ভ্রক্ষোভ করছে না।

এপেক্স ফুডস কর্মকর্তারা জানান, একদিকে আন্তর্জাতিক বাজার মোটামুটি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, অন্যদিকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে আগের বছরের লোকসান কাটিয়ে মুনাফা দেখাতে সক্ষম হয়েছে এপেক্স ফুডস।

এ ব্যাপারে কোম্পানির সহকারী সচিব কামরুল ইসলাম সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা; যা এ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি। আর অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে শুধু চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার; যা মোট হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। এতে জানানো হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।

এর মধ্যে প্রথম ৭ মাসে ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার আয়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি। ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই মেয়াদে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে এ খাতের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩২ কোটি ৯১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

২০১৭-১৮ অর্থবছরেরর প্রথম ৭ মাসে জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার; যা এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ২৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের প্রথম

৭ মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় ৫৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার; যা এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে

৩৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে রপ্তানিতে আয় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই- জানুয়ারি মেয়াদে হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ২ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে চিংড়ি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। আর এই সময়ে আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ২৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে চিংড়ি রপ্তানি আয় ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছে।