DSE_lg20160127095835সাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১০২টি কোম্পানি ৫ কোটি টাকার কম মূলধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই পরিমাণ সম্পদ নিয়ে ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও ৪৪টি। এমন পরিস্থিতিতে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নূন্যতম মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আনতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

পূর্ণাঙ্গ ব্রোকারেজ সেবা দিতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর নূন্যতম ১৫ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এমন বিধান রেখে আইন করছে কমিশন। এজন্য ঝুঁঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা বিধিমালার খসড়া প্রণয়নও করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইতে ব্রোকারেজ ব্যবসা পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১ কোটি টাকার নিচে আছে ১৬টি, ৫ কোটি টাকার নিচে ১০২টি, ১০ কোটি টাকার নিচে ৪০টি, ১৫ কোটির নিচে ১৯টি, ২০ কোটি টাকার নিচে ৭টি, ২০ কোটি টাকার উপরে আছে ৫৫টি এবং ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে নিষ্ক্রিয়।

এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা বিধিমালা করছে বিএসইসি। এর খসড়া ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এটি হলে পুঁজিবাজারের জন্যই ভালো হবে। তবে এর জন্য কিছু সময়ও প্রয়োজন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, খসড়া আইনটি নিয়ে মতামত নেওয়ার পর এ সংক্রান্ত কমিটি তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আইনে যা থাকবে তা পরিপালনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দেওয়া হবে শুরুর দিন থেকে ২ বছর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নূন্যতম ১৫ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।

বিএসইসির খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক স্টক ব্রোকার ও ডিলারকে নূন্যতম রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে সাধারণ স্টক ব্রোকিংয়ের ক্ষেত্রে ৫ কোটি, হোলসেল ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩ কোটি, মার্জিন ঋণ পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও ৫ কোটি, স্টক ডিলার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আরও ২ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।

সার্বিকভাবে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সিকিউরিটিজ হাউজকে নূন্যতম ১৫ কোটি টাকার মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এর বাইরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্য যেকোনো নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের নূন্যতম রেগুলেটরি মূলধন বিএসইসি নির্ধারণ করে দেবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা কাঠামোর আওতায় সব ইন্টারমিডিয়ারিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট দায়ের ৮ শতাংশ অর্থ অথবা স্টক ব্রোকার ও ডিলারদের ৪ কোটি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকদের ৫ কোটি, সম্পদ ব্যবস্থাপক ও তহবিল ব্যবস্থাপকদের ২ কোটি এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোর জন্য ১ কোটি টাকা, যেটি বেশি হবে সে পরিমাণ নগদ মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।

নূন্যতম রেগুলেটরি মূলধন ও নগদ মূলধনের বাইরে ইন্টারমিডিয়ারিগুলোকে ডিসক্লোজারের আওতায় আনারও প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়। প্রত্যেক মাস কিংবা প্রান্তিক শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রতিবেদনে সমন্বিত আয়, ব্যাংক ঋণ, অগ্রিম, ঋণ সুবিধা, মোট মূলধন, মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত ও নগদ মূলধনের তথ্য থাকতে হবে।

পর্যাপ্ত মূলধন নিশ্চিত করার বিষয়ে কমিশন কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষে লিখিত আকারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে কমিশন যেকোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে। এদিকে নির্ধারিত নূন্যতম মূলধন পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে না পারলে কোনো ইন্টারমিডিয়ারি তার শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

মূলধন পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত ধারা সংযোজন ও প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রুল ১৯৮৭-এর ১৫ ধারা এবং সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬-এর উপ-বিধি (২) সংশোধন করবে বিএসইসি। সর্বোপরি প্রস্তাবিত ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা বিধিমালা-২০১৮-এর যেকোনো ধারা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ বিষয়ে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন করা হলে এটি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। এটি হলে প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারবে তাদের সক্ষমতা। সক্ষমতা বুঝে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

বিষয়টি নিয়ে কমিশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই করার জন্য ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন ব্যবস্থা অনেক ভ‚মিকা পালন করবে। এটি শুধু বিনিয়োগকারী বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরই নয়, সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। এটি প্রায় চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে এ নীতি এখন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০২ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ত পরিমাণ নিশ্চিতে ব্যাসেল-১ নামে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত নীতি প্রচলন করেছিল। বর্তমানে ওই নীতির নতুন সংস্করণ ব্যাসেল-২ ও বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৫ সালের শেষের দিক ব্যাসেল- ৩ চালু হয়েছে।