good companyদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের গতীশিলতা, বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশীয় ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে তালিকাভুক্ত ও তালিভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে করের ব্যবধান আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এই ব্যবধান কমপক্ষে ২০ শতাংশ রাখাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব স্টক এক্সচেঞ্জ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর দেয় ২৫ শতাংশ। আর তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানিকে কর দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘনিয়ে আসছে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে পুঁজিবাজারের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কোটি মানুষের ভোট ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার জরুরি।

আগামি বাজেটকে সামনে রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), দি ইনিস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)ও ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ)। একই প্রস্তাব দ্রæত অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জমা দেবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

ডিএসইর প্রস্তাব: এনবিআরকে ডিএসইর পক্ষ বলা হয়, তালিকাভুক্ত ও তালিক?ার বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে আয়কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর দেয় ২৫ শতাংশ। আর তালিকার বাহিরে থাকা কোম্পানির কর দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। আসছে বাজেটে তা পরিবর্তন করে ২০ শতাংশ করা, স্টক ব্রোকার এবং ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেনের ওপর শূন্য দশমিক ০১৫ শতাংশ কর করা প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়াও লভ্যাংশ আয়ের উপর কোম্পানি অগ্রিম কর আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে মুওকুফ করা, ডি-মিউচ্যুয়ালাইযেশন স্টক এক্সচেঞ্জ পরবর্তী ডিএসইর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বাজেটে শতভাগ কর অবকাশ রাখা,ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লকে থাকা ৬০ শতাংশ শেয়ার বিক্রয় বা হস্তান্তরের উপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফ করা, লভ্যাংশ আয়ের উপর কোম্পানি অগ্রিম কর আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে মওকুফ করা এবং আসছে বাজেটে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুবিধা একান্ত প্রয়োজন বলে লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়।

সিএসইর প্রস্তাব: বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের উপর করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা, আইপিওর মাধ্যমে নূন্যতম ২০ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পরবর্তী ৩ বছর আয়করের উপর ৫০ শতাংশ রেয়াত সুবিধা দেওয়া, মওকুফকৃত মার্জিন ঋণ ও সুদকে কর আওতার বাহিরে রাখা, সফটওয়্যার মেইনটেইনেন্স ফি’র উপর উৎসে কর ৫ শতাংশ করা, এক তালিকাভুক্ত কোম্পানি অন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির অর্জিত লভ্যাংশের উপর কর বাতিল করা।

বিএমবিএ’র প্রস্তাব: মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়, এখন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ৩৫ দশমিক ৫শতাংশ হারে কর দিতে হয়। তার পরিবর্তে আগামী তিন বছরে পর্যায়ক্রমে ৩২ দশমিক ৫, ৩০ দশমিক ৫ ও ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে কমিয়ে আনা। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির (ব্যাংক, বিমা, এনবিএফআই, সিগারেট ও মোবাইল কোম্পানি ব্যতিত) কর হার ২৫ শতাংশ। এটিকে আসছে বাজেটে জন্য ২৩ শতাংশ, পরের বাজেটে ২২ শতাংশ ও ২০২০-২০২১ সালের বাজেটে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এই দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে ঢাকা চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজও।

ইআরএফ: অর্থনীতি প্রতিবেদকদের পক্ষ বলা হয়, পুঁজিবাজারের লিস্টেড এবং নন লিস্টেড কোম্পানির কর হার আরেকটু ঢেলে সাজানো দরকার।এই সুবিধা দেওয়া হলে নন-লিস্টেড কোম্পানি বাজারে আসবে।তাদের উপর মনিটরিং বাড়বে।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে লিস্টেড ও নন লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট আয় করের ব্যবধান ২০ শতাংশে বৃদ্ধি করা উচিত। এটি করলে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্লুচিপ কোম্পানি এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তকরণ সহজ হবে। পাশাপাশি তারা তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ পাবে। যা সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভ‚ঁইয়া বলেন, আগামী বাজেটে করপোরেট কর কমানো হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা নাও বাড়ানো হতে পারে।