medicine -deshprotikhonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতে তৃতীয় প্রান্তিকে অধিকাংশ কোম্পানির মুনাফা কমেছে। তবে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় মুনাফায় বেশ ভাটা পড়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে ওষুধ শিল্প খাতের শেয়ার। কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনার খবরের পর মুনাফায় ভাটা পড়ায় এ খাতের বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দু:চিন্তায় পড়েছেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ার। এছাড়া এ খাতের কোম্পানিগুলো তৈরি ওযুধ ও রসায়ন বিদেশে তাদের ব্যবসায়ী অবস্থান বেশ শক্ত করছে। এমন সময় এ খাতের অধিকাংশ কোম্পানি আয় কমা বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। যা শেয়ারবাজারের জন্য দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবু আহমেদ  বলেন, শেয়ারবাজার বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে কোম্পানিগুলো। আমাদের দেশের ওযুধ এখন বেশ সুনামের সঙ্গে বিদেশে যাচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি দিন দিন এ ব্যবসা, সুনামের পরিধিসহ আয় বাড়ুক। তবে এটা মনে রাখতে হবে সব কোয়াটারে আয় বাড়বে এমনটিও নয়। হতে পারে কোন কারণে আয় কমতে পারে। তবে চলতি অর্থবছর শেষ হলে এমনও দেখা যেতে পারে আয় অনেকে বাড়বে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, প্রতিনিয়ত ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। যেহেতু ওষুধ নিত্যপ্রয়োজনীয় সুতারাং এ খাতের অবস্থা ভাল হওয়ার কথা। বরং ইপিএসে উল্টা চিত্র দেখা গেছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশের বাইরেও ওষুধের বাজার প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ওষুধের লেনদেন প্রবৃদ্ধি। সে কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ওষুধ খাতের মুনাফা বাড়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএসে ভাটা পড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘দেশের প্রতিনিয়ত ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। ফলে প্রসারিত হচ্ছে ওষুধের বাজার। তাছাড়া দেশের বাইরেও বাংলাদেশি ওষুধের বাজার বর্তমানে বেশ প্রসারিত হয়েছে। ফলে ওষুধ খাতের কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদে মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

যা গত অর্থবছরের (জুলাই ২০১৬- মার্চ ২০১৭) প্রথম নয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের (জুলাই ২০১৭- মার্চ ২০১৮) প্রথম নয় মাসে এ আয় কমেছে। এতে ওই খাতে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরবে এমনটি মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতে ২৯টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭- মার্চ ২০১৮) এ পর্যন্ত ২৭টি কোম্পানির তথ্য প্রকাশ হয়েছে। বাকি ২ কোম্পানির তথ্য এখন প্রকাশ হয়নি। তাই প্রাপ্ত তথ্য হিসাবে ওই ২৭টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টির আয় কমেছে। আয় বেড়েছে ১৩টি কোম্পানির।

আয় কমা বা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমা কোম্পানিগুলো হলো: লিবরা ইনফিউশন, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, সেন্ট্রাল ফার্মা, এসিআই ফর্মুলেশন, এসিআই, ইমাম বাটন, এ্যাডভেন্ট ফার্মা, ফার কেমিক্যাল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, রেকিট বেনকিজার, গ্লাক্সো স্মিথক্লাইন, ওয়াটা কেমিক্যাল ও একটিভ ফাইন।

আর ইপিএস বাড়া ১৩ কোম্পানি হলো: ফার্মা এইড, বিকন ফার্মা, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, রেনেটা, কোহিনূর কেমিক্যাল, বেক্সিমকো ফার্মা, ইবনে সিনা, স্কয়ার ফার্মা, এমবি ফার্মা, সালভো কেমিক্যাল, একমি ল্যাবরেটরিজ, জেএমআই ও এএফসি এগ্রো।

কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে চলতি অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে (জুলাই ২০১৭- মার্চ ২০১৮) আয় কমা ১৪টির প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইপিএস কমেছে লিবরা ইনফিউশনের। এ কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে নেগেটিভ ১২.৬৫ টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪.৮৮ টাকা। সেই হিসাবে ইপিএস কমেছে ১৭.৫৩ টাকা।

এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কমেছে বেক্সিমকো সিনথেটিক্সের। এ কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে নেগেটিভ ২.৪৬ টাকা। যা আগের বছর ইপিএস ছিল নেগেটিভ ১.৩৯ টাকা। ৩য় সর্বোচ্চ কমেছে সেন্ট্রাল ফার্মা। এ কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ০.২৯ টাকা। যা আগের বছর ইপিএস ছিল ০.৯৯ টাকা।

ওই সময়ে এসিআই ফর্মুলেশনের ইপিএস হয়েছে ২.৭৪ টাকা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫.৫০ টাকা; এসিআইয়ের ইপিএস হয়েছে ৮.৯৫ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ১৫.১১ টাকা, রেকিট বেনকিজারের ইপিএস হয়েছে ৭.৩৪ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ১১.৫৪ টাকা, গ্লাক্সো স্মিথক্লাইনের ইপিএস হয়েছে ১১.৪৯ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ১৪.৬৬ টাকা, ইমাম বাটনের ইপিএস হয়েছে নেগেটিভ ০.৮৫ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ০.৭০ টাকা, এ্যাডভেন্ট

ফার্মার ইপিএস হয়েছে ০.৯৮ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ১.২৪ টাকা, ফার কেমিক্যালের ইপিএস হয়েছে ১.২০ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ১.৪৭ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ইপিএস হয়েছে ১.০৩ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ১.১৪ টাকা,

ওরিয়ন ফার্মার ইপিএস হয়েছে ২.৭৬ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ৩.০২ টাকা, ওয়াটা কেমিক্যালের ইপিএস হয়েছে ২.৯৮ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ৩.১২ টাকা ও একটিভ ফাইনের ইপিএস হয়েছে ২.০১ টাকা আগের অর্থবছরে ছিল ২.০৪ টাকা।