dse dorpotonমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে শেষ হয়েছে ডিভিডেন্ড ঘোষনার মৌসুম। আর দীর্ঘ এক বছরের বিনিয়োগের বিনিময় পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এবারের ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সাথে মিল নেই। পাশাপাশি ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিমান কম হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছেন না। তবে ডিভিডেন্ড মৌসুমে বাজারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলছে।

এদিকে পুঁজিবাজার ২০১০ সালে মহাধসের কবলে পড়ায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। ধসের পর থেকে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে আসায় ডিভিডেন্ডের পরিমাণও কমেছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা সমন্বয় করতে না পেরে এখনো বয়ে চলছে লোকসানের বোঝা।

এদিকে ব্যাংকগুলোর দেয়া বিশেষ ছাড়, চীনা কনসোর্টিয়ামের অনুমোদনসহ নানাবিধ সুখবরের কোনো ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না দেশের পুঁজিবাজারে। দিন যত যাচ্ছে শেয়ারের মূল্য ততই কমছে। ফলে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

অথচ বাজারে গুঞ্জন ছিল চীনের কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন পেলে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আসার সঞ্চার হয়। কিন্তু উল্টো চীনা কনসোর্টিয়াম অনুমোদন পাওয়ার পর লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসই দরপতন ঘটেছে। আর বাজারে এমন টানা পতন অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এভাবে প্রতিদিন শেয়ার দর কমতে থাকলে সপ্তাহ শেষে মোটের ওপর আরও বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন। এমনিতেই তারা লোকসানে রয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এই বাজার কিছু লোকের জিম্মায় রয়েছে। তারাই বিভিন্ন ইস্যু সামনে রেখে কৃত্রিমভাবে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। আর এই ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

আর এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থাৎ সূচকের এমন পতন হলে তাদের ধৈর্য থাকবে না। ফোর্সসেল দিয়ে অনেকেই বের হয়ে যাবেন। বড় ধরনের পতনের মুখে পড়বে বাজার। কাজেই এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রকদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভ‚মিকা নেওয়া জরুরি।

যদিও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে যে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে তার মূল কারণ কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতে পারেনি। বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো খুব একটা সন্তোষজনক লভ্যাংশ দেয়নি। নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস শেয়ার দেয়ার এক ধরনের হিড়িক পড়েছে।

এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ব্যাংকগুলো মারাত্মক সঙ্কটে রয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে। ফলে বাজারে এক ধরনের তারল্য সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। যে কারণে চীনা কনসোর্টিয়ামের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার সুখবরের প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না বলেও ধারনা তাদের।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বিনিয়োগকারীদের যে কোনো পরিস্থিতি মানিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কিছু আছে বলে মনে হয় না। পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বাড়বে-কমবে এটা স্বাভাবিক। বিনিয়োগকারীদের উচিত সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলা শিখতে হবে।

অল্পতে ভয় পেলে চলবে না। তবে আমাদের দেশের শিল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংকমুখী না হয়ে পুঁজিবাজারকেও কাজে লাগাতে হবে। আর পুঁজিবাজার থেকে যদি বিভিন্ন বড় করপোরেট হাউজগুলো অর্থ সংগ্রহ করত তাহলে কিন্তু ব্যাংক কেলেঙ্কারি অনেকাংশে কমে যেত বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।