ligদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রথম দিনেই কে হচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। তবে আলোচনার মাঝে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশ্ন কে হচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন ও উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতাদেরকে ছাড় দেয়ার মনোভাব নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সমঝোতার মধ্য দিয়ে নেতা নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৭ বছর বয়সের সীমা এক বছর বাড়িয়েছেন তিনি। নেতা হওয়ার সর্বোচ্চ বয়স সীমা এখন হবে ২৮।

শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলন উদ্বোধনের পর ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কমিটির নেতারা বক্তব্য রাখেন। সব শেষে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ছাত্রলীগের ইতিহাস, দেশের স্বাধীকার, স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সংগঠনটির ভূমিকা ও ত্যাগের বর্ণনার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অর্জনের বিষয়টি তুলে ধরেন।

নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) সাবজেস্ট কমিটি বসবে। সেখানে ইতোমধ্যে কারা কারা নেতৃত্বে আসবে দরখাস্ত করেছে। আমি চাই সমঝোতার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের নেতৃত্ব নিয়ে আসো। তোমরা নিজেরা বসে তোমরা সমঝোতার মাধ্যমে করো, সেটাই আমরা চাই।’

ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘স্যাক্রিফাইস করাটা শিখতে হবে। স্যাক্রিফাইস না করলে কিন্তু কিছু অর্জন করা যায় না। অর্জন তখনই করতে পারবে যখন কিছু দিতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘তোমরা এমন নেতৃত্ব খুঁজবে যারা সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে তোমাদের এই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারে, যাতে আগামীদিনে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারো জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে।’

নতুন নেতৃত্বের বয়স প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের বয়স আমরা ২৭ বছর করে দিয়েছিলাম। দুই বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ ৯ মাস বেশি হয়ে গেছে। আমি চাই না এই ৯ মাস বেশি হয়েছে বলে কেউ বঞ্চিত হোক। কাজেই এটাকে আমরা ১ বছর গ্রেস দিতে পারি। কাজেই ২৮ বছরের মধ্যে আছে যারা তারাই হবে। কারণ, এখন কোনও সেশন জট নেই। ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যেই কিন্তু মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হয়ে যায়। দরকার হলে ডাবল মাস্টার্স করা যায়। এরপরও বয়স থাকে।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ গঠন করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ছয় দফাতেও ছাত্রলীগের ‍ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবদান রেখেছেন।

সত্তরের নির্বাচনে ঘরে ঘরে ঘুরে ছাত্রলীগ ভোট চেয়েছে। আমিও ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আমিও অংশ নিয়েছি। আমাদের বহু সহকর্মী জীবন দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। মার্শাল ল’ যারা জারি করেছিল তাদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম করেছে ছাত্রলীগ।’

জিয়াউর রহমানের সময়ে ছাত্র সমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিলেন। এককভাবে মানুষের ভোট কেড়ে নিয়ে যায় তারা। নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। সেখানেও যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে ছাত্রলীগের অবদান ছিল।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ওই বছরের ২৩ মার্চ বিদায় নেন খালেদা জিয়া। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জয়ী হই। কিন্তু পরে ২০০১ সালে সবাইকে অত্যাচার করেছে বিএনপি-জামাত জোট। তারা বাংলা ভাই সষ্টি করে, দেশজুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এমনকি পরে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। ওই সময়ও ছাত্রলীগ আন্দোলন করেছে প্রতিবাদ করেছে।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা যে দলেরই হোক তাদের কেউ ছাড় পাবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি যারাই বিশঙ্খলা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, ছাত্র রাজনীতি আমরা করব। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং সবার আগের কাজ।

উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিনের গত ২৫ ও ২৬ এপ্রিল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলন পর থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা শুরু করেছে জোর লবিং তদবির। নিজ নিজ বলয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের বাসা অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন তারা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে আলোচনায় থাকলেও দীর্ঘ দিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করা আসাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অদক্ষতা ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া আসাদ নগর ভবন কেন্দ্রীক রাজনীতি করেন বলেও অভিযোগ সংগঠনেরই বর্তমান কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার। সম্প্রতি নগর ভবনে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের দু পক্ষের সংঘর্ষেরে ঘটনা ঘটে। এতে আসাদের গ্রুপের কয়েকজন আহত হয়।

এছাড়া কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মারুফ আলোচনায় থাকলেও তার বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে কদমতলী থানায় একটি মামলা রয়েছে। গত বছরের ২৪ নভেম্বরে করা এই মামলার এজাহারে মারুফকে ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে। এছাড়া এর আগে ২০১৩ সালের এক ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যতন আইনে দায়ের করা এক মামলার আসামীও ছিলেন তিনি। যদিও পরে সেই মামলা মিমাংশা হয়ে গেছে।

এর বাইরে দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি বায়জিদ আহমেদ খানের আশীর্বাদপুষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদক এম. সাইফুল ইসলাম সাইফ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সভাপতি পদে বর্তমান হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আরো আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আশরাফুল করিম সাগর ও মহানগর দক্ষিন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো:আরমান হোসেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ এর আত্মীয় হওয়ায় আলোচনায় আছেন মহানগর ছাত্রলীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ।

আলোচনায় আছেন তৃনমূল থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব ৯নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। আলোচনায় রয়েছেন কবি নজরুল সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাওলাদার, দক্ষিণের সহ-সম্পাদক বারেক হোসেন আপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবির হাসান আরিফ। মহানগর (দ:) এর সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম অর্ণব, গোলাম রব্বানী রাজবীর,

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুরাদ মোবারক, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ্ সৌরভ, আলোচনায় আছেন সাহিত্য বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইসতেয়াক আহমেদ শরীফ, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রসেনজিৎ সিংহ, সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম রাসেল, নগর (দ:) এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন তপু।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখায় সভাপতি পদে এগিয়ে আছেন সহ-সভাপতি  ইসমাইল হোসেন তপু, মেহেদী আলম তম, সহ-সভাপতি জাকির হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফসারা নাদিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী অন্তু ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম হাসান।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে আছেন সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সহ-সভাপতি মাহবুব আলম সুমন, সহ-সভাপতি মিলন মুন্না, সহ-সভাপতি আলী রাজ, সহ-সভাপতি আরিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি নিলয়েন বাপ্পী, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মোহাম্মাদ সুজাউদ্দীন তুহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসাইন।

এদিকে সম্মেলনের প্রথম দিন উত্তরের ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে ইসমাইল হোসেন তপুর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। নেতাকর্মীদের মাঝে একটাই প্রশ্ন শীর্ষ পদে ইসমাইল হোসেন তপুকে চাই। কারন দলের দু:সময়ে তপুরের মত কান্ডারী দরকার। তাছাড়া সামনে আন্দোলন সংগ্রামে ইসমাইল হোসেন তপু’র মতো দলের নিবেদিত কর্মী প্রয়োজন।

তাছাড়া যার শরীরে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযোদ্দার রক্ত। তার চেয়ে কে বেশি দলকে ভালবাসতে পারবে। ইসমাইল হোসেন তপুর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরুহুম মো: শহিদুল্লাহ ৭৫ এর পরবতী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতলব উপজেলার। তপু বর্তমানে এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নত। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও নটরডোম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স হিসাববিজ্ঞান সমাপ্ত করেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পড়াকালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তপু। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তপু ছিলেন রাজপথে। এক এগারোর পর শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। আর আন্দোলন সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার রবিউল-রানা কমিটির সহ সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর সদ্য সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন।

তপুর একজন সমর্থক বলেন, ‘তপু ভাই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্রদের দাবি আদায়ে সব সময়ই মাঠে ছিলেন। রাজপথে তার ভূমিকা সব সময় প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে হাজারিবাগ ও ধানমন্ডিতে দায়িত্ব পালন করেন। তপুর তার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে নিজ সংগঠনে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

জানতে চাইলে ইসমাইল হোসেন তপু বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকেই মুজিব আদর্শের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে সব আন্দোলনে ছিলাম। বর্তমান সরকারের সময়ও বিএনপি-জামায়াতের সব অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিলাম। নেত্রী যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, তাহলে আগামী ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগকে সবার সামনে একটি মডেল হিসাবে গড়ে তুলব।