bb-dse-cseফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট মুখ্য বিষয় নয়, বাংলাদেশের ব্যাংকের আন্তরিকতার কারনে বাজারের হযবরল অবস্থা। এ অবস্থা থেকে উত্তরন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে নমনীয় হতে হবে। কারন সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিলেও বাজার চাঙ্গা হচ্ছে না। এর পেছনে মুল কারন বাংলাদেশ ব্যাংক।

কারন পুঁজিবাজার ইস্যুতে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিএসইসি ডিএসইসির সহযোহিতা নিয়ে নিতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। শীর্ষ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা একই সুরে এসব কথা বলেন।

এছাড়া পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণ হচ্ছে তারল্য সংকট। এ বাজারে তারল্য সংকটের জন্য একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে আমাদের পুঁজিবাজারে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আরও অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তার জন্য পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। বাজারের প্রতি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজারের গতি ও আস্থা বাড়াতে দুটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে দরপতনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকটাই দিশেহারা অবস্থা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। এমনকি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তারাও ক্রমাগত দরপতনে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

সবার এখন একই প্রশ্ন কী হলো শেয়ারবাজারের। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সবাই এখন মহা বিপাকে।

এ বিষয়ে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, সংকটের মূলে ব্যাংক খাত। শেয়ারবাজার ইস্যুতে ব্যাংকের এক্সপোজার গণনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে জটিল অবস্থা তৈরি করে রেখেছে, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারির টানা দরপতনের সময় অর্থমন্ত্রী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেয়ারবাজার এক্সপোজার গণনায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে গভর্নর ফজলে কবীর যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার একটাও বাস্তবায়িত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সংকটাবস্থায় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবিকে আমানত বা ঋণ গ্রহণে একক গ্রাহকসীমা-সংক্রান্ত বিধান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

সেটিও করা হয়নি। বস্তুত ব্যাংকের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআরআর কমানোসহ নানা নীতি-সহায়তা দিলেও শেয়ারবাজারের জন্য কিছু করেনি। এটাও বাজার সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খামখেয়ালীর কারণে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসতে চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারণেই শেয়ারবাজারের এমন সংকট চলছে বলে তাঁরা মনে করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

তাঁরা অভিযোগ করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর ব্যাংকিং বিষয়ে পেশাধারী ব্যক্তিত্ব নন। তাঁর আশে-পাশে যারা রয়েছেন, তারা সবাই শেয়ারবাজার বিরোধী মনোভাবের কর্মকর্তা। সে কারণে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখনো সময় আছে। অন্যথায় শেয়ারবাজার তছনছের সব দায়-দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নিতে হবে।

সাম্প্রতিক বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, যে কোনো দেশের পুঁজিবাজারের সাথে সে দেশের জিডিপির ইতিবাচক সম্পর্ক থাকে। অন্যান্য দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। তাই এখনও এই বাজারের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন করা সম্ভব।

তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের তারল্য বুঝে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকির বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। বাজারের পরিধি বৃদ্ধি করতে সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আসার প্রয়োজন রয়েছে। এক সময় ২২টি কোম্পানিকে বাজারে আনার প্রচেষ্টা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি।