পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি ব্যর্থ!
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীরতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি ব্যর্থ, এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। কারন বাজার একটানা ১২ কার্যদিবসে দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সবার একটাই প্রশ্ন পুঁজিবাজারের অবিভাবক কে। কারন টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজি নি:স্ব হওয়ার পথে।
সরকার থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে যুক্ত করার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না পুঁজিবাজার। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে যে তৎপরতা তা বড় ধরণের সুখবর হিসেবে সংশ্লিষ্টরা অবিহিত করলেও বাজারে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
বরং টানা দরপতনের মধ্যেই রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। আর টানা দর পতনের রেকর্ড গড়ে ১২ কার্যদিবসের ডিএসইর প্রধান সূচক সাড়ে ৫ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। যা আতঙ্কিত করে তুলছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। সব পুঁজি হারিয়ে পথে বসার অবস্থায় রয়েছেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সা¤প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের গতিবিধি যা হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এত বছর পর আমরা পুঁজিবাজারে কৌশলগত অংশীদার আসলো। পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকেও বাজার নিয়ে সব ইতিবাচক মন্তব্য, তারপরও দেশের পুঁজিবাজার নেতিবাচক দিকে ধাবিত হচ্ছে।
কেন এমনটা হচ্ছে সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ কোনো একটি শেয়ারের দর দু-চার দিন বাড়লেই তারা বিভিন্ন তদন্ত শুরু করে দেয়, অথচ দর কমার সময় কোনো খবর থাকে না। এ ক্ষেত্রে তারা কি ধরেই নিচ্ছেন যে দেশের বাজার এখন অতিমূল্যায়িত অবস্থায় আছে?
নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে দর বাড়লেই শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়ে শেয়ার সংগ্রহ করবে, তা নয়। যৌক্তিক দরের নিচে শেয়ারদর নেমে গেলেও মাঝারি বা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ প্রচন্ডভাবে ক্ষুন্ন হয়। আর এটি দেখার দায়িত্ব কি তাদের নয় এমন প্রশ্ন থেকেই যায়?
বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজারে বেশ কয়েকটি বড় কারসাজি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০-১১ সালের বাজার ধসের সময় অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। আর এ জন্যই সবার এই খাতের ওপর একটি নেতিবাচক ধারণা কাজ করে, যে কারণে শেয়ারদর একটু বাড়লেই সবাই ভয়ে বা আতঙ্কে থাকে।
আর এই মানসিকতা থেকে সবার বেরিয়ে আসা খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি, সেটি টেকসই করার জন্য পুঁজিবাজারকে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। তা না হলে দেশের অর্থনীতি টেকসই হবে না। আর দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে কোনো কাজেই আসছে না, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব খারাপ একটি দিক।
এছাড়া আমাদের পুঁজিবাজার একটি ইকুইটি নির্ভরশীল বাজার, যা পৃথিবীর কোনো দক্ষ বাজারেই নেই। পাশাপাশি দেশে যারা স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করছে বা যেসব বহুজাতিক কোম্পানি এদেশে ভালো ব্যবসা করছে, তাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে তেমন অংশগ্রহণই নেই। ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী নয়। কাজেই এ বিষয়ে দীর্ঘসূচিতা না করে তৎপড়তা বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, টানা দরপতন কোন স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের লক্ষণ নয়। তাছাড়া টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা দু:চিন্তায় পড়া স্বাভাবিক। বর্তমান পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। এর দায়ভার কে নিবে।