HRদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি এইচআর টেক্সটাইলকে ঘিরে এবার সক্রিয় হয়েছেন শীর্ষ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ। কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রন কার হাতে। এসব প্রশ্ন এখন খোদ বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। ফলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরদারিতে রয়েছে এ কোম্পানি।

এ সকল কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বাড়া নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দু:চিন্তায় রয়েছেন। কোন কারন ছাড়াই বাড়ছে এ কোম্পানির শেয়ারের দর। স্বল্প মূলধনী এই কোম্পানির শেয়ার স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুততম সময়ে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। বস্ত্র খাতের অন্যান্য কোম্পানির দরবৃদ্ধিকে এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তারা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে তালিকাভুক্ত এইচ আর টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১১.৬১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৭.৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিকে ঘিরে মূলত কারসাজি বা সিরিয়াল ট্রেডিং শুরু হয়েছে সম্প্রতি। এর পর দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কিছু দিন যেতে না যেতে ফের আজ সব্বোর্চ লেনদেন নিয়ে কোম্পানিটি বিক্রেতা শুন্য হয়ে যায়। দিনটিতে কোম্পানিটির সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

আজ দুপুর ১২.৩০ মিনিটে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। যা আগে কখনও ঘটেনি। ওইদিনে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি শেয়ার কিনেছে বাজারে অন্যতম একটি কারসাজি ব্রোকারেজ হাউজ। এর আগে ব্রোকারেজ হাউজটি কয়েকটি শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির নেপথ্যে ছিল। এছাড়া আরও কয়েকটি কোম্পানির দরবৃদ্ধির নেপথ্যে হাউজটির সক্রিয়তা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বল্প মূলধনী কোম্পানির কারণে এই চক্র সহজেই শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দর বাড়াচ্ছেন। যদিও কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির পেছনে কোন কারণ নেই। তবুও থামছে না কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির আগের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে। কিন্তু সেটিও এই দরবৃদ্ধির সঙ্গে কোনভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ এই কোম্পানির দর এখন সর্বোচ্চ ৪২.৮০ টাকায় অবস্থান করছে।

ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও ৭ মে ডিএসইতে কোম্পানিটির মোট ১৯ লাখ ৮২ হাজার ১৮৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আবার সেই ২৪ মে কোম্পানির ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে এ কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এর কারণ খতিয়ে দেখবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে শেয়ার দরে অস্বাভাবিক লেনদেনের পেছনে কারসাজি বা বিধি বহির্ভূতভাবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে কোম্পানিগুলোকে শোকজ করেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কিন্তু কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষরা।

কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বিএসইসির সার্ভিলেন্স বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যেহেতু কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হয়নি তাই এইখানে অন্য কোনো পক্ষ থেকে কারসাজি হয়েছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো। কারসাজির ঘটনা ঘটে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর দর যখন বাড়ছে, ঠিক এই সময়ে একই চক্র যারা ঝুঁকি নিতে পারেন তারা এই কোম্পানিকে ঘিরে দ্রুত মুনাফা করতে চাচ্ছেন। ফলে কোম্পানিটির দর ও লেনদেন বাড়ছে। কিন্তু এই দরবৃদ্ধির কোম্পানিটির মৌলভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।