BsECদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ইস্যুতে এবার নড়েচড়ে বসছে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, আইসিবিসহ শীর্ষ ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো। টানা দরপতনের পেছনে দুইটি ইস্যু দীয় করলেন নীতি নির্ধারকরা। এর মধ্যে বর্তমান বাজার দরপতনের পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রেগুলেটরদের সমন্বিত  জরুরি।

এছাড়া পুঁজিবাজারের টানা দরপতন ঠেকাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাগুলো। তবে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে স্থিতিশীলতার জন্য পুঁজিবাজার রেগুলেটরদের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

তেমনি বর্তমান বাজার দরপতনের পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ী করেছেন তারা। আজ আইসিবি’র সঙ্গে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের আলোচনায় এমন মত দেওয়া হয়েছে। আর এর সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে।

সভায় আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী সানাউল হক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থিত প্রতিনিধিদের কাছে মতামত জানতে চান। তিনি এসময় বলেন, আমরা যদি ইতিবাচক চিন্তা করি তবে এই সাময়িক অবস্থা কেটে যাবে। যার যার পক্ষ থেকে বাজারকে সাপোর্ট দিতে হবে। তিনি বলেন, মার্কেট পড়লে আমাদের সবার জবাবদিহিতা বেড়ে যায়। সম্প্রতি যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে; তাতে আপনাদের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়।

তিনি আরও বলেন, বাজারের এই অবস্থা উন্নয়নে বিএসইসির পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। কিভাবে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইস্যুর সমাধান করা যায়; অর্থমন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে তা নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এসময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারে সমস্যাগুলোকে তুলে ধরে একটি চিঠি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এতে ওই সময়ে সূচক ৫০০ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েছিলো। তবে ওই চিঠির ওপরে কোনো সমাধান না আসায় বাজার আবার আগের অবস্থানে চলে গেছে।

তিনি বলেন, এর সঙ্গে বিদেশি পোর্টফোলিওতে বিক্রি চাপ বেড়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে নেগেটিভ ইস্যুসহ বেড় কিছু কারণে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত ফান্ডও অনেকেই নেই। তাতে সাপোর্ট দেওয়াটা সক্রিয়ভাবে হয়ে উঠছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক বলেন, আইসিবি তার অবস্থান থেকে বাজারকে সাপোর্ট দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আইসিবি বিনিয়োগকারীদের ৩০০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে দিয়েছে।

বাজার এই পরিস্থিতি উন্নয়নে এক্সপোজার সমস্যার সমাধান,  ডিমান্ড সাইট শক্তিশালীকরণ, ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল বৃদ্ধি, ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তিকরণ, ব্রোকারেজ হাউজের শাখা বৃদ্ধি, শর্ট সেল চালুকরণসহ রেগুলেটরদের সমন্বিত উদ্যোগের কথা উঠে আসে সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের মতামত থেকে।

ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, শেয়ারবাজারের চলমান মন্দাবস্থার কারন অনুসন্ধান ও করণীয় নিয়ে আইসিবিতে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সবার খোলামেলা আলোচনায় শেয়ারবাজারে পতনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী বলে মনে করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে পতনের পেছনে তারল্য সংকট রয়েছে। আর এই তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারনে। তারা শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা দিয়ে সংকট তৈরী করেছে। অথচ তা সমাধানের জন্য কাজ করছে না।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে কিছু সুপারিশ করলেও ব্যাংকটি থেকে তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া সভায় শেয়ারবাজারে পতনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে কারন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। এছাড়া আজকের সভায় উপস্থিত স্টেকহোল্ডারগন শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।

বাজার এই পরিস্থিতি উন্নয়নে এক্সপোজার সমস্যার সমাধান,  ডিমান্ড সাইট শক্তিশালীকরণ, ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল বৃদ্ধি, ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তিকরণ, ব্রোকারেজ হাউজের শাখা বৃদ্ধি, শর্ট সেল চালুকরণসহ রেগুলেটরদের সমন্বিত উদ্যোগের কথা উঠে আসে সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের মতামত থেকে।

এসময় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক, বিএসইসির সার্ভিল্যানস বিভাগের পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।