bsec-dse lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫ কোম্পানির শেয়ারকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে কারসাজিকারীরা। এর জের ধরে এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কোন কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। আর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া এসব কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে ইনসাইডার ট্রেডিং’র অভিযোগ রয়েছে। দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে কোম্পানিগুলোর কারসাজির রহস্য ও কোন কোন সিকিউরিটিজ হাউজ থেকে ইনসাইডার ট্রেডিং’র অভিযোগ।  এইদিকে অস্বাভাবিকহারে শেয়ার দর বাড়ার কারণে এই ৫ কোম্পানি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে রয়েছে বলে কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে।

কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের পেছনে কারসাজি বা বিধি বহির্ভুতভাবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে সম্প্রতি শোকজ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানিগুলো হলো- মুন্নু জুট স্টাফলারস, সিনোবাংলা, এইচ আর টেক্সটাইল, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং, কুইন সাউথ টেক্সটাইল।

জানা যায়, গত কয়েক কার্যদিবসে ধরে এসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। আর তাই কোম্পানিগুলোর কাছে দর বাড়ার কারণ জানতে চায় ডিএসই। তারই প্রেক্ষিতে দর বাড়ার কোন মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষ।

মুন্নু জুট স্টাফলারস: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্পমূলধনী কোম্পানি মুন্নু জুট স্টাফলারসের শেয়ার দর গত দুই মাসে লাফিয়ে ১৩৩ শতাংশ বেড়েছে যা অতীতের সবোর্চ্চ রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। ‘আঙুল ফুলে কলা গাছ’ হয়ে উঠা এ ধরনের শেয়ার কেনা-বেচার ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শেয়ারবাজার বোদ্ধারা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ কোম্পানির প্রতি শেয়ার ৮০৮ টাকা থেকে লাগামহীনভাবে বেড়ে ২০৩৭ টাকায় উঠে এসেছে। শেয়ারের দাম বাড়ার ঘটনা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আশঙ্কাকে শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, কারণ ছাড়াই যে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে পারে। তবে তার একটা সীমা থাকে। সীমা অতিক্রম করলেই প্রশ্নের জন্ম দেয়। এক কথায় আলামতবিহীন শেয়ার দর বাড়া মানেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর লক্ষণ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেয়ারবাজার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোম্পানির পিই ১৫ ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই বেঁধে দিয়েছে। ওই হিসাবে ২২ মে মুন্নু জুট স্টাফলারসের পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৪৮১ পয়েন্ট, যা বিনিয়োগের ঝুঁকিমাত্রা অসীম।

তারা বলছে, গত দুই মাস ধরে মুন্নু জুট স্টাফলারসের শেয়ার দর লাগামহীনভাবে বাড়ছে। যা ওই সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ। অন্যদিক, কোম্পানিটির বর্তমানে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যে (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৮.৩৯ টাকা। যা কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর এনএভিপিএসের ৩৯ গুণ বেশি। এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ মানে পুঁজি অন্ধকারে ফেলার মত অবস্থা।

ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, মুন্নু জুট স্টাফলারসের পরিশোধিত মূলধন ৪৬ লাখ টাকা। ওই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার। দুই মাস আগে মানে চলতি বছরের ২৮ মার্চ মুন্নু জুট স্টাফলারসের প্রতি শেয়ারের দর ছিল ৮০৮ টাকা। ওই হিসাবে কোম্পানির মোট শেয়ারের দর হয়েছিল ৩৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। দুই মাসে কোম্পানিটির প্রতি শেয়ার দর বেড়ে ২২ মে দাঁড়িয়েছে ১৮৮৫ টাকা।

সিনো ব্যাংলা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর কোন কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে। সূত্রমতে, শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কোন কারন নেই বলে কোম্পানি জানালোও শেয়ার দর বাড়ছেই। চায়নার গুজব ছড়িয়ে এ শেয়ারের দর টানা বাড়ছে। এর পেছনে কাজ করছে কারসাজি চক্র।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩০ এপ্রিল থেকে শেয়ারটির দর বেড়েই চলেছে। এ সময়ে শেয়ারটির দর ৪২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ৬০.৩০ টাকা উঠলে দিন শেষে ৫৭.৯০ টাকা শেয়ারটির সর্বশেষ শেয়ারটির লেনদেন হয়। অর্থাৎ এ সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১৮ টাকা। আর শেয়ারটির এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, এ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ১৯৯৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

কুইন সাউথ টেক্সটাইল: অস্বাভাবিক হারে শেয়ার দর বাড়ছে কুইন সাউথ টেক্সটাইলের। কারন বিহীন বাড়ছে এ শেয়ারটির দর। গত এক মাসে এ শেয়ারের দর দ্বিগুনের বেশি বাড়ছে। আর এ দর বাড়ার পেছনে অপ্রকাশিত কোন প্রকার কারণ নেই বলে জানিয়েছে কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডর পরিচালনা পর্ষদ।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক কার্যদিবস থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে চলেছে। গত ৪ এপ্রিল এ শেয়ারের দর ছিলো ২৭.৭০ টাকা। আর ২৩ মে এ শেয়ারের লেনদেন হয়েছে ৫১.৫০ টাকায়। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। যা অস্বাভাবিক মনে করছে ডিএসই।

এইচ আর টেক্সটাইল : বস্ত্র খাতের কোম্পানি এইচ আর টেক্সটাইল লিমিটেডের শেয়ার দর বাড়ার কোনো কারণ নেই। শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চাইলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চেয়ে সম্প্রতি ডিএসই নোটিস পাঠায়। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, কোনো রকম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দর বাড়ছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২২ জুন থেকে শেয়ারটির দর বেড়েই চলেছে। ঐ সময়ে শেয়ারটির দর ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ২৩ মে পর্যন্ত ৪২ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। অর্থাৎ এ সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৭.৫০ টাকা। আর শেয়ারটির এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে তিনটি সিকিউরিটিজ হাউজ কারসাজিতে জড়িত।

ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিংয়ের লিমিটেডের শেয়ার দর কোন কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে। সূত্রমতে, শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কোন কারন নেই বলে কোম্পানি জানালোও শেয়ার দর বাড়ছেই। নানা গুজব ছড়িয়ে এ শেয়ারের দর টানা বাড়ছে। এর পেছনে কাজ করছে কারসাজি চক্র ও কয়েকটি সিকিউরিটিজ হাউজ।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৭ মে থেকে শেয়ারটির দর বেড়েই চলেছে। এ সময়ে শেয়ারটির দর ৪৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ৫৭.৪০ টাকা উঠলে দিন শেষে ৫৪.২০ টাকা শেয়ারটির সর্বশেষ শেয়ারটির লেনদেন হয়। অর্থাৎ এ সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে প্রায় ১১ টাকা। আর শেয়ারটির এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বিএসইসি’র সার্ভিলেন্স বিভাগের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেহেতু কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হয়নি তাই এখানে অন্য কোন পক্ষ থেকে কারসাজি হয়েছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো। কারসাজির ঘটনা ঘটে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।