dse dorpotonসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের বছরকে ঘিরে জনমনে আস্থা যোগাতে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু ভিন্ন চিত্র পুঁজিবাজারের। টানা দর পতন ও লেনদেন মন্দা বিগত ১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক। পাশাপাশি সামান্য বিরতিতে বিগত ১৫ কার্যদিবসের ধারাবাহিক পতনে বাজারের ৪৬.৭৩ শতাংশ বা ১৪৩টি কোম্পানির শেয়ার দর বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি ও ২০১০ সালের ধসের কারণে দুর্নাম কুড়িয়েছে আওয়ামী সরকার। তাই বর্তমান পুঁজিবাজারের ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর আস্থা কুড়াতে নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হবে।

তারা বলেন, ভোটের রাজনীতির বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে পুঁজিবাজার। কারণ, এ সেক্টরে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী থাকলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ সেক্টরের সাথে প্রায় ১ কোটি মানুষ জড়িত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর আতিউর রহমান বলেন, একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার খুবই জরুরী। আমি সব সময় একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের পক্ষে ছিলাম। পরিস্থিতির কারণে কখনও কখনও আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে তা পুঁজিবাজারের জন্য ভাল সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, সরকারসহ সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এখন বাজার একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। বাজার এখন অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। আগামী দিনে তা আরও ভাল করবে।
ডিবিএ মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকট থাকলেও পুঁজিবাজারে এই সমস্যাটি তেমন নেই।

প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে যতেষ্ঠ তারল্য থাকার পরও তারা বাংলাদেশ ব্যাংককের ভয়েই বিনিয়োগ করছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু বিষয়ে নমনীয় হলেই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এক্ষেত্রে সরকারের দ্রুত ভুমিকা নিতে হবে। কারন নির্বাচনী বছর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না থাকলে এর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে; সেগুলো সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে এক্সপোজারের সমস্যা। এছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে কস্ট প্রাইসে এক্সপোজার বিবেচনা, একই বিনিয়োগ দৈত গণনা, বন্ডে বিনিয়োগকে এক্সপোজারের বাইরে দেখা।

বাজারের বর্তমান অবস্থা এবং সরকারি পদক্ষেপের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম বাকী খলিলী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, ব্যবস্থাপনাটাই এখন হ-য-ব-র-ল। সরকারের উচিত ছিল বাজার নিযন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসির সাথে আলোচনা করেই বিভিন্ন সিদ্ধান নেয়া। কিন্ত তা করা হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পারছি না।

এ ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকলেও এসব বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাওয়ার কোনোই অর্থ হয়না। এখানে সরকারের সমন্বয়ের অভাব আছে, যেমনটি আছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে। সরকারের কাছে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এই পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসনের কার্যক্রম হাস্যকর। বাজারকে স্বাভাবিক করতে সমন্বয় জরুরি।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের ব্যাপারে একটা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়। আর এটা যাতে করতে না পারে সে জন্যই বিএসইসি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা সে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে চরম আস্থার সঙ্কট, যার কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বা মার্কেট মেকাররা বাজারে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা বিনিয়োগ খোয়াতে চান না। তিনি বলেন, দু-একটা জিনিস দিয়ে এই বাজারের ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

শুধু স্পন্সর ডিরেক্টরদের দিয়ে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না। এ জন্য আইসিবির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনতে হবে। তাদের বিনিয়োগ আবার বাজারে আনতে হবে। তারা এখন চরম ভয়ে আছে। সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা তারা বাজারে বিনিয়োগ করে খোয়াতে চায় না। তাই বাজার স্থিতিশীল করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৬ এপ্রিলের পর থেকে টানা দর পতনে ভুগছে পুঁজিবাজার। এসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৫২.৭০ পয়েন্ট। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক কমেছে ৭৯০.০৭ পয়েন্ট।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২৬ এপ্রিল ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ৬৬৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। কিন্তু অব্যাহত দর পতনে বুধবার (২৩ মে) দিন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭২ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ১৬ কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ২১ হাজার ৫৯৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।