dse dorpotonজ্যৈষ্ঠ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে দরপতন থামছে না। টানা দরপতনে পুঁজি হারাতো শুরু করছেন বিনিয়োগকারীরা। দেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের রেকর্ড হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেন হয়েছে ২১ কার্যদিবস। এর মধ্যে ১৯ কার্যদিবসই সূচক কমেছে, কমেছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার এবং ইউনিট দর, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। পক্ষান্তরে এই সময়ের মধ্যে মাত্র তিন কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক।

গত এক মাসের বাজারচিত্রে দেখা যায়, গত মাসের প্রথম দিন থেকেই সূচকের পতন শুরু হয়, যা চলে টানা ১২ কার্যদিবস। এরপর এক দিনের বিরতি দিয়ে আবারও নিম্নমুখী হয় বাজার। এভাবে দুই দিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর টানা চার কার্যদিবসের পতন দিয়ে মাস শেষ হয়। মাসজুড়ে সূচকের এই অস্থিরতায় পুঁজি হারিয়েছেন প্রায় সব বিনিয়োগকারী।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, এর আগে কখনোই এক মাসে ১৯ কার্যদিবস সূচকের পতন ঘটেনি। ২০১০ সালে যখন পুঁজিবাজারে স্মরণকালের বড় ধস নামে তখন এক মাসের মধ্যে আট থেকে ৯ দিন সূচক ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। অর্থাৎ সেই সময়কার পতন ছিল কিছুটা বিরতি দিয়ে। কিন্তু এবারের টানাপতন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত এক মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক হ্রাস পেয়েছে ৫৮৪ পয়েন্ট, দৈনিক যার গড় প্রায় ২৮ পয়েন্ট।

বাজারের এই নাজুক পরিস্থিতিতে বেহাল দশায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এই পরিস্থিতি কীভাবে ঠিক করা উচিত ভেবে পাচ্ছেন না তারা। কারণ কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না পুঁজিবাজারের সার্বিক চিত্র, বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে। মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করে দেখতে হচ্ছে এর উল্টো চিত্র।

কাজে আসছে না কোম্পানির ইপিএস, শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত, কিংবা শেয়ারপ্রতি সম্পদের হিসাব। অন্যদিকে কিছু দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দেখা মিলছে মুনাফার। কোনো ব্যাকরণেই মিলছে না হিসাব। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কেউই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চেয়ে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণসহ নতুন-পুরোনো সব বিনিয়োগকারী। ক্যাপিটাল গেইনের আশায় বিনিয়োগ করে বড় ধাক্কা খেয়েছেন তারা। এখন এ বাজার ছেড়ে বের হয়ে যাবেন, তারও কোনো উপায় নেই।

সাম্প্রতিকালের বাজারচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ছিল। ফলে তখন বাজারে আসেন নানা শ্রেণির মানুষ। কিন্তু বছরের শেষদিকে নানা ইস্যুতে বাজার পতন শুরু হয়। ফলে বেকায়দায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা। মুদ্রানীতি ইস্যু, রাজনৈতিক অস্থিরতা সর্বোপরি কৌশলগত বিনিয়োগকরী ইস্যু সমাধান হওয়ার পর পুঁজিবাজার স্বাভাবিক চিত্র পাচ্ছে না। উল্টো প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।