sadek-lago-viজয়নাল আবেদিন, মহসিন সুজন, বরিশাল থেকে ফিরে: বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী ৩০ জুলাই বরিশালসহ তিন সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর এ তিন সিটি নির্বাচন আলোচনায় চলে আসে। তিন সিটির ভোটের আয়োজন একই দিনে করায় জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের এটাই সবচেয়ে বড় আয়োজন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় বরিশাল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বেশ উৎফুল্ল ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেননা তাদের দল এখন সরকার ক্ষমতায়। প্রশাসনের কাছ থেকে তারা এক ধরনের বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে ধরেই নিয়েছেন। তা ছাড়া এমপিরাও তাদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবে বলে তারা মনে করছেন। সবকিছু মিলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বেশ উৎফুল্ল।

অন্যদিকে খুলনার সিটি নির্বাচনের পর নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে চিন্তিত বরিশালের বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেননা খুলনায় যেভাবে ভোট হয়েছে সেই একইভাবে তিন সিটিতে ভোট হলে তারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে এমনটা নিশ্চিত হতে পারছেন না। তা ছাড়া বর্তমানে তারা সরকারে নেই, সংসদেও নেই। ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা যদি সিটি নির্বাচনে প্রচারণা চালায় তাহলে তারা প্রশাসনের কাছ থেকে সমান সুবিধা পাবেন কি না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায়।

sadek-abdullahএ ছাড়া দীর্ঘদিন তাদের দল ক্ষমতায় না থাকার কারণে নেতাকর্মীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। অনেকের নামে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় অনেকে আত্মগোপনেও রয়েছেন। তারা যদি দলের প্রার্থীর প্রচারণায় প্রকাশ্যে আসেন তাহলে গ্রেপ্তার হতে পারেন। এমন আশঙ্কা থেকে অনেক নেতাই দলীয় প্রার্থী পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। এসব কারণে বরিশালের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা লক্ষ করা গেছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই বরিশালের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়রপ্রার্থী করতে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম মেয়রপ্রার্থী পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল জানান, তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র পদে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপিতেও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের দিকেই তাকিয়ে আছেন নেতারা। কেন্দ্র থেকে যে কেউ মনোনয়ন পেলেও মজিবর রহমান সরোয়ারের আর্শীবাদ পাওয়া ছাড়া বরিশালে বিএনপির প্রার্থীর মেয়র হওয়া কঠিন।

vi 2এ ছাড়া অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন: জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বর্তমান মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন। এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনও মেয়র পদে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে কর্মী সমর্থকরা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে বরিশালের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট। শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর বরিশাল আ’লীগের হাল ধরেন সাদিক আবদুল্লাহ। কাশিপুর থেকে রসুলপুর, রূপাতলি থেকে তালতলী,পলাশপূর থেকে মহম্মদপুর প্রত্যেকটি যায়গায় নেতাকর্মীদের ভালো বাসায় মিশে আছেন সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহ।

দিনরাত সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে ছুটে যাচ্ছেন এ নেতা। অবশ্য ইতোমধ্যে বরিশাল’র পাড়া-মহল্লা, নগর ছাড়িয়ে এখন দেশও সমধিক উচ্চারিত। কোন বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে নামটি যুক্ত না থাকলেও স্বীয় প্রজ্ঞা আর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে বরিশালের গণমানুষের হৃদাসন জয় করেই আজ নামটির খ্যাতি বরিশালের গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের মাটিতেও সমানভাবে সমাদৃত সাদিক আবদুল্লাহ।
ছিলেন বরিশাল নগরীর একটি ছোট্ট মহল্লায়। খেলাধুলা ও সংগীত চর্চায় শৈশবে নিজেকে জড়িয়ে রাখলেও নগরবাসীর অনেকেই তখন জানতো না সাদিক আব্দুল্লাহর নাম। ২০১৪ সালে শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে দক্ষিণবঙ্গের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

এর পর ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক। বর্তমানে বরিশালের রাজনীতিতে ইতিহাস। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামীলীগের একক মেয়র মনোনয়ন প্রার্থী তিনি। বরিশালে প্রধান মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জনসভায় বিপুল লোক সমাগম ও সাজসজ্জাকরণ’র মাধ্যমে নিজের যোগ্যতার জানান দেন যথারীতি এ নেতা।

আর এজন্যই নগরবাসী ভালবাসে তাদের চিরচেনা এই নেতার নামের পাশে কখনো জননন্দিত কখনো যুবরতœ শব্দটিও যুক্ত করে দেন অবলীলায়। আর এভাবেই লাখো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া সেদিনের সেই সাদিক আবদুল্লাহ আজ নগর-দেশে প্রিয়পাত্র। বর্তমানে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ লড়ছেন বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।

কবিতার দুটি লাইনের সাথে এই রাজনীতিবিদের যৌবনকালের অদ্ভূতরকম মিল আছে। “এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”। ঠিক এই লাইনটির মতোই সাদিক আবদুল্লাহ নিজের যৌবনকালকে প্রথাগত চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ঘরসংসার করার জীবন বেছে নেননি। তিনি বেছে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দৃপ্ত শপথ। লড়াইয়ে রক্তেভেজা রাজপথ, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের অনিশ্চিত এক জীবন।

বরিশালের রাজনীতিবিদরা মনে করেন যাদের জীবন শুধু সংগ্রামের, ত্যাগের; যারা দিতে জানে বিনিময়ে কিছু নিতে জানে না প্রকৃত অর্থে তারাই মানুষ। যাদের অনুসরণ করলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়। সে রকম একজন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালের বর্তমানে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ। নানা ঝড়ঝাপ্টার মাঝেও দলীয় আদর্শে তিনি অবিচল থাকেন। তাইতো দলীয় নেতা কর্মীদের নিকট হয়ে উঠেন বড় অবলম্বন।

নগরভবন ঠিকানা না হলেও বর্তমানে মহানগরীর মানুষ এখন তাকে ‘ভবিষৎ মেয়র’ বলেই সম্বোধন করে। সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে ছুটে যায় তার কাছে। সাদিকও নিরাশ করেন না বিপদে পড়া তার প্রিয় নগরবাসীকে। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে মরহুম শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়কে সাদিক আব্দুল্লাহ একটি অভিজ্ঞতা হিসেবেই নিয়েছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর এখন সকাল-সন্ধ্যা কাটে সাধারণ মানুষকে নিয়ে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বাসার নিচতলার ড্রইংরুমে দেখতে পান অপেক্ষমাণ মানুষের জটলা। কেউ এসেছেন সমস্যা নিয়ে, আবার কেউ বিচারপ্রার্থী হতে। সাদিক সবার কথা শোনেন, সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন।

বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন কিছুতেই বাদ পড়ছেন না সাদিকের। তাকে ছাড়া যেন নগরবাসীর কোনো অনুষ্ঠানই পূর্ণতা পায় না। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড শেষে মধ্যরাতে যখন সাদিক ফেরেন তখনো মানুষের আনাগোনা থাকে নগরীর কালীবাড়িস্থ বাসায়।

সাদিক মনে করেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার দাদা, বাবা সবাই বরিশালের মাটিতে রাজনীতি করেছে। আমিও তাদের বাইরে নই। আমি কোন কুট রাজনীতি বুঝি না। ওই রাজনীতি করতেও চাই না। দেশ ও বরিশালের উন্নয়নের জন্য কোন কাজই আমি ভয় পাই না। আমি জনগনের মাঝেই থাকতে চাই। জনগনের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নিয়েই রাজনীতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। মানুষের ভালোবাসাকে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মেনে নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই মানুষের কল্যাণে, দলের কল্যাণে।

সাদিক আবদুল্লাহ’র বাবা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতির কর্ণধার। শুধু আওয়ামী লীগের কর্ণধার বললে কিছুটা ভুল হবে। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক। সকল দলের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা ভরে দেখেন তাকে। তার বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন গরীব মেহনতি মানুষের নেতা।

তবে এ শহীদ নেতা ‘নেতার’ মতো আচরন করেন নি কখনো। খেটে খাওয়া মানুষের প্রাণের বন্ধু ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। তারই সুযোগ্য পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। যার হাত ধরে-ই বিশৃঙ্খল বরিশালে ফিরেছে শৃঙ্খলা, বিরাজ করছে শান্তি। দক্ষিণাঞ্চলের এই রাজনৈতিক অভিভাবকের উত্তরসূরী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

খুব স্বল্প সময়ে সকল বয়সী মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন এই তরুন নেতা। সাদেক আব্দুল্লাহ’র মাঝেই আগামী দিনের নগর পিতার নেতৃত্ব খুঁজে পাচ্ছেন প্রবীণ নেতারা।

তৃর্নমুল নেতাকর্মীদের মতে, ‘সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মাঝেই দেখা যায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিচ্ছবি, আর যার শরীরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতার রক্ত তার চেয়ে কে ভালবাসতে পারবে আ’লীগকে। যা আরো একবার প্রমান হলো বরিশালে শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে।

তরুন এ নেতার প্রশংসার পঞ্চমুখ ছিলেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আ’লীগের সিনিয়র নেতারাও। কারন তার অক্লান্ত পরিশ্রমে বরিশাল নগরী পরিণত হয়েছে আনন্দের নগরী। বরিশাল মহানগর আ’লীগ নেতা সাদিক আব্দুল্লাহর সুষ্ঠু নেতৃত্বে সুন্দর ও শান্তি ফিরেছে বরিশালে। তার ডাকে বরিশাল মহানগরের ও ওয়ার্ড আ’লীগ এবং ১০ উপজেলাসহ সকল নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে ওঠে। প্রতিটি এলাকায় তার নেতৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধু বরিশাল নয় বরিশালের অজপাড়া গায় একটি নাম উচ্চারিত হচ্ছে তা হলে সাদিক আবদুল্লাহ। তাই বরিশাল সিটির নগরপিতা হিসেবে তাকেই দেখতে চায় তৃনমূল। এদিকে নেতা-কর্মীদের কোন মানুষের বিপদের কথা শুনলেই ছুটে যান সেখানে তিনি। সব মিলিয়ে এই তরুন নেতা কর্মীদের মন জয় করে নিয়েছেন। যার ফলে তরুন নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যেভাবে মানুষের মতে জায়গা করে নিচ্ছেন তাতে বলাই যায়, বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জল নক্ষত্র তিনি।

তবে নগরপিতার টিকেট হাতে মাঠে নামতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা আধাজল খেয়ে ঢাকায় কেন্দ্র এবং বরিশালে তৃনমূল ম্যানেজে দৌড়ের ওপর থাকলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট-বাস্তবিক কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে তাদের মনোনয়ন প্রাপ্তি ও জয়-পরাজয়।

এক্ষেত্রে ১০ বছর ক্ষমতাসীনের আসনে থাকা আওয়ামী লীগ দলের টিকেট নিয়ে কে আসছেন বরিশাল নগরের ভোটারদের দরজায় তা নিয়ে জল্পনা-গুঞ্জন-চুলছেড়া বিশ্লেষণের অন্ত নেই এখানকার রাজনীতিক মহলের ভেতরে-বাইরে।

তবে টিকেট যার হাতেই থাকুক না কেন, বিএনপির ঘাটি বরিশালে নগরপিতার চেয়ার দখল যে কতটা অসাধ্য সাধন, তা গত নির্বাচনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন মরহুম শওকত হোসেন হিরন। আওয়ামী লীগের সর্ব পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও বুঝেছেন, ফাটাকেষ্ট এবং আধুনিক নগরের রূপকার উপাধিপ্রাপ্ত প্রয়াত হিরনই যখন হোচট খেয়েছেন, সেখানে যেই-সেই নেতা টিকেট নিয়ে আসলেই জয় ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

বরিশাল আওয়ামী লীগের সূত্র মতে, ইতিপূর্বে বেশ কয়েক নেতার মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা শোনা গেলেও এখন সেই তালিকা ক্ষীণ হয়ে ঠেকেছে দুই নামে। বহু আগেই সিটি মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ এবং সেই টার্গেট পূরণে অগ্রসর হতে হতে ইতিমধ্যে দলে এবং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ভরসার স্থান দখল করেছেন মহানগর আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যুবরতœ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

এছাড়াও আ’লীগের সমর্থন পেতে দৌঁড়ঝাপ করছেন ১/১১ পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে বরিশালে আ’লীগের পরাজিত প্রার্থী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম। এর বাইরে আর কেউ আ’লীগের মনোনয়ন পেতে চাইলেও তারা প্রকাশ্যে নিরব। লবিং-তদবির চললেও তা অন্তরালে।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে, মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতার কর্মতৎপরতা এবং রাজনৈতিক দক্ষতার আকাশ-পাতাল ব্যবধানের চিত্র। দলীয় লোকজন বলছেন, বরিশাল নগরী ছাড়িয়ে মোটামুটি গোটা বিভাগজুড়ে চলছে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর জয়-জয়কার। শুধু সিটি নির্বাচন নয়, সাদিকের জনসমর্থন পরীক্ষা করতে বরিশালে তাকে যেই নির্বাচনে দল সমর্থন করবে সেখানেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবেন তিনি।

অপরদিকে কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম সম্পর্কে তাদের বক্তব্য, তিনি ব্যক্তি হিসেবে কেমন সেটাই এখন পর্যন্ত জানেন না বরিশালবাসী। অপরাজনীতি করতে গিয়ে মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়া আ’লীগের কিছু আগাছা-পরগাছা গিয়ে তার সাথে হাত মিলিয়ে তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মেয়র বানিয়ে দেওয়ার।

তবে সেই স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার মত কোন প্রেক্ষাপটই তৈরী হয়নি। দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তাদের বক্তব্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেহেতু দলের সকল সংগঠনের বরিশাল নগরের আওতাধীন সবকটি ইউনিট সাদিক আবদুল্লাহকে ভরসার শেষ ঠিকানা হিসেবে আপন করে নিয়েছে। সেখানে সাদিক ব্যতিত অন্য কাউকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দিলেও নির্বাচনী মাঠে কর্মী খুঁজে পাবেন না সেই প্রার্থী। এক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে বসে থেকে নিজ দলের প্রার্থীকে ডোবাতেও প্রস্তুত তারা।

ফলে সিটি নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী ঘরানার পরিস্থিতি এমন যে, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ টিকেট না পেয়ে এখানে অন্য কেউ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলে তার পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরাই।

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত, জয়ের তরী নিজ ক‚লে ভেরাতে প্রার্থী নির্ধারণে কর্মী-সমর্থক এবং ভোটার-বান্ধব কাউকেই বাছাই করতে হবে। আর এক্ষেত্রে যদি শুধু কর্মী-সমর্থক বান্ধব কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে দূরে অথবা কর্মীহীন জনবান্ধব কাউকে প্রার্থী করা হয় তা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হবে।

আর সাধারণ মানুষ সব সময় জোয়ারের দিকেই হাটে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে উচ্চ পর্যায়ে থাকা সাদিক আবদুল্লাহ ব্যতিত অন্য কেউ আ’লীগের প্রার্থী হলে সাধারণ ভোটাররাও তাকে বর্জন করবে। যে কারণে সাদিক আবদুল্লাহ আ’লীগের টিকেট না পেলে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আ’লীগের বিজয় অসম্ভব বলা চলে।