Dse-upসাজিদ খান ও ফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নির্বাচনী বছর পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া দরপতন থেকে উত্তরণের পাশাপাশি বাজারের চলমান তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে নতুন করে পুঁজিবাজার যেন অস্থিতিশীল না হয়। এ কারণে সরকারকে যাতে বিব্রত হতে না হয়।

তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু নতুন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। আসন্ন বাজেটের পর অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
সুত্রে জানায়, দেশের পুঁজিবাজারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোরালো ভুমিকা রাখার মতো একটি স্টক এক্সচেঞ্জে উন্নতি করতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরুর উপর গুরুত্বারোপ করা হবে।

এজন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি গ্রুপকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব দেওয়া হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত। এছাড়া ভালো সিকিউরিটিজের যোগান ও সেগুলোর চাহিদা বাড়াতো পুঁজিবাজারে প্রাইভেট ইক্যুইটি ও ডেরিভেটিকস প্রচলনে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন প্রডাক্ট চালু, বিভিন্ন টেকনিক্যাল অগ্রগতি, এসএমই বান্ধব প্লাটফর্ম গড়ে তোলাসহ একচেঞ্জের টেকসই উন্নয়নে কাজ শুরু করকে সরকার।

page 1 (82)এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সচিব ইউনূসুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সমন্বয়ে একটি যৌথ থিংক ট্যাংক গড়ে তোলা হবে। তারা পুঁজিবাজারকে মুলধন উত্তোলনের জন্য যথোপযুক্ত জায়গা হিসেবে তৈরি করে বাজারের গভীরতা বাড়াতো কাজ করবে।

পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীলতা উল্লেখ করে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেটের পর একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য পুঁজিবাজারের একটি গ্রুপের সঙ্গে বসে বাজার ঠিক রাখার দায়িত্ব দেয়া হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, অতীতে বিচ্ছিন্ন ভাবে রেগুলেটরি সংস্কারের মাধ্যমে সুফল পাওয়া যায়নি। তাই দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের জন্য রেগুলেটরি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ধরনের সংস্কার করা আব্যশক। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য কর প্রনোদণার পাশাপাশি সমন্বিত ভাবে আর্থিক ও মুদ্রানীতির পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৪ সালের পর বাংলাদেশ বিদ্যমান অনেক সুবিধা পাবে না। এ জন্য সামনের সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে প্রাইভেট ইক্যুইটি ও ডেট ইক্যুইটি এবং ডেরিভেটিভস প্রচলনের উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পায়নের দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের উৎস হিসেবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার মোটেই কার্যকর হয়নি বলে তিনি দু:খ প্রকাশ করেন। আমাদের এখানে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো কাজ করছে। শেয়ারবাজারে এ দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হওয়া উচিত।

তাই দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের মাধ্যম করার লক্ষে পুঁজিবাজারকে সাজাতেই হবে। পুঁজিবাজারের এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উন্নয়নে এক্সপোজার সমস্যার সমাধান, ডিমান্ড সাইট শক্তিশালী করন, ব্রোকারেজ হাউজের শাখা বৃদ্ধি, শটসেল চালুকরনসহ রেগুলেটরদের সমন্বিত উদ্যোগের কথা উঠে আসে সংশ্লিষ্টদের মতামত থেকে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র সাইফুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, যে কোন দেশে যেখানে বার্ষিক উন্নয়নের ৬০-৮০ শতাংশ আসে পুঁজিবাজার থেকে। সেখানে আমাদের দেশে ২ শতাংশ আসে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পুঁজিবাজার একটি পরীক্ষামুলক পদ্ধতি।

এখান থেকে অর্থ নিতে হবে এর বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে চাইলে আল্টিমেটলি ব্যাংক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দুটি ফেল করবে। পুঁজিবাজার ছাড়া পৃথিবীর আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি যার মাধ্যমে দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল করা যায়।