nordanদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের পাট খাতের তালিকাভুক্ত নর্দার্ন জুট বছরান্তে মুনাফা করে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান গুনেছে ৪.০৪ টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসানের মাত্রা সামান্য কমলেও শেয়ার প্রতি লোকসান ৩.০৮ টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকের ৬ মাসে কোম্পানিটির লোকসান দাঁড়ায় ৭.১২ টাকা। এখানেই শেষ নয়!

তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসান দ্বিতীয় প্রান্তিককে ছাড়িয়েছে লোকসান। এসময় কোম্পানির লোকসান হয়েছে ৩.৯৩ টাকা। আর ৯ মাসে কোম্পানিটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ১০.৩৮ টাকা। কোম্পানিটির ধারাবাহিক লোকসানের কারনে দীর্ঘ ৩৪ বছর উন্নয়ন সহযোগি হিসাবে থাকা বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) বিক্রয় করে দিয়েছে তাদের সমস্ত শেয়ার। তাই বিনিয়োগকারীদের মনে হাজারো প্রশ্ন, তবে কি ‘জেড’ ক্যাটাগরিই কোম্পানিটির গন্তব্য ? কিন্তু শেয়ার দর বাড়ার রহস্য কি?

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান তৃতীয় প্রান্তিকে ১০ টাকা অতিক্রম করায় কোম্পানিটি নিয়ে তেমন আশা নেই। পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক বাজারের সাথে পাল্লা দিতে পারছে না কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতে চতুর্থ প্রান্তিকে কোন কারণে মুনাফা করলেও গত ৯ মাসের লোকসান সমন্বয় করে ভালো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্ধোহ রয়েছে।

তারা বলেন, এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোম্পানিটির দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪.০৪ টাকা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩.০৮ টাকা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৩.৯৩ টাকা লোকসান হয়েছে। অর্থাৎ গত অর্থবছরে কোম্পানিটি যেখানে শেয়ারপ্রতি ৫.১৩ টাকা মুনাফা করেছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই’১৭-মার্চ’১৮) কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান গুণছে ১০.৩৮ টাকা। ক্রমাগত লোকসানে ডুবতে থাকায় কোম্পানিটির বিনিয়োগকারা এখন ‘নো ডিভিডেন্ড‘ আতঙ্কে রয়েছেন।

নর্দার্ন জুট কেন হঠাৎ বড় আকারের লোকসানের কবলে পড়ছে-এ বিষয়ে কোম্পানির একাউন্টস ম্যানেজারউজ্জল কান্তি ধার বলেন, “আমাদের উৎপাদিত সুতা ভারতে ৮০ শতাংশ ও চীনে ২০ শতাংশ রপ্তানি করা হয়।

এবছর পাটের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। আবার উৎপাদিত সুতার দরও কমে গেছে ৫ শতাংশের বেশি। এখন আমাদেরকে ৫ শতাংশ বেশি দরে পাট কিনতে হচ্ছে, আবার ৫ শতাংশ কম দরে সুতা বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে আমাদেরকে ক্রমাগত লোকসান গুণতে হচ্ছে।”

সহসা এ অবস্থার উন্নতি হবে কীনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সহসা উন্নতির সম্ভাবনা কম। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দর কেবলই কমছে। তবে আমরা নিরাশবাদী নই।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নর্দার্ণ জুটের উদ্যোক্তা-পরিচালক আইডিবি নিজ উদ্যোগে পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় আইডিবি’র কাছে ছিল কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ শেয়ার। আর স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাছে ছিল ১৬.০৬ শতাংশ শেয়ার। দীর্ঘদিন থেকে আইডিবি’র সঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বনিবনা না হওয়ার কারণে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে কোম্পানিটির পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ায়।

পরে প্রতিষ্ঠানটির কাছে থাকা ৩০ শতাংশ শেয়ার বাজার মূল্যে বিক্রি করে দেয়। আইডিবি পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ানোতে প্রতিষ্ঠানটির ন্যূনতম শেয়ারধারণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটে।

কিন্তু তারপরও কোম্পানিটির স্থানীয় উদ্যোক্তরা তাদের শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দিতে থাকে। বর্তমানে স্থানীয় উদ্যেক্তাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার ১৬.০৬ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫.০৩ শতাংশে। অবশিষ্ট ৮৪.৯৭ শতাংশ শেয়ার এখন ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কো্ম্পানিটিতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বা বিদেশি বিনিয়োগ নেই।

আইডিবি’র একটি সূত্র জানায়, কোম্পানিটির অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকেই আইডিবি জোর আপত্তি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আইডিবি’র কোন অভিযোগেরই তোয়াক্কা করছিল না। উপায়ান্তর না দেখে আইডিবি কোম্পানির পর্ষদকে না জানিয়েই পদত্যাগ করে বসে এবং প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাজার দরে বিক্রির করার সরাসরি ঘোষণা দেয়।