badugt lagoফাতিমা জাহান ও মাহামুদুল হাসান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করায় পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বড় অংশই ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের। কর্পোরেট কর হার কমানোর কারণে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফায় কিছু হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে সার্বিক শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক পড়বে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের টানতে নতুন বছরের বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী।

মুহিতের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করা হবে। আর অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত উভয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, কর্পোরেট কর হার কমানো পুঁজিবাজারের জন্য একটি ভালো সংবাদ। বাজারে এর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। কারণ কর্পোরেট কর হার মাত্র আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে।

ডিএসই’র ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করেছেন তাতে শেয়ারের বাজারের জন্য খারাপ কিছু নেই। সুতরাং বাজেটের কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আমরা আশা করছি।

তিনি বলেন, বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানির একটি বড় অংশ এই খাতের। কর্পোরেট কর হার কমানোর কারণে এ খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আমাদের বেশি কিছু দাবি রয়েছে। আমাদের সেই দাবিগুলো বাজেটের পর মেনে নেয়া হবে বলে আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বাজেট প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বাজেটে সরাসরি পুঁজিবাজারের জন্য কোনো ঘোষণা নেই। তবে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হ্রাস হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবেন, যার পরোক্ষ প্রভাব দেখা যাবে পুঁজিবাজারেও।

এছাড়া তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত তৈরি পোশাক কোম্পানির করহারে ঘোষিত ব্যবধানটিও এ খাতের অনেক কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী করতে পারে। তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে কাজ করছি আমরা সবাই।

ডিএসই সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠঅন ও বীমা  কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে। এটি নি:সন্দেহে ভালো প্রস্তাব। কারন পুঁজিবাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ কোম্পানি এই তিন খাতের।

সে বিবেচনায় করপোরেট করের হার কমায় কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ভাল হবে। তারপরও এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বরং অনেকদিক বিবেচনায় এবারের বাজেট পুঁজিবাজারেরর জন্য মন্দের ভালো। তিনি আরো বলেন, সঞ্চয় পত্রের সুদের হার কমাতে হবে। সঞ্চয় পত্রের  সুদের হার না কমাতে পারলে পুঁজিবাজারে সাধারন মানুষ আসবে না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী করপোরেট ট্যাক্স কমানোর কথা বলেছেন। আর করপোরেট ট্যাক্স কমলে তার একটি প্রভাব অবশ্যই পুঁজিবাজারে পড়বে। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর যে পার্থক্য, যা এখন ১০ শতাংশ আছে, সেটি ডিএসই ১৫ শতাংশ করার দাবি করেছে তা একটি যৌক্তিক দাবি বলে মনে করি।

কারণ কেউ যদি ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এবং ভালো কোম্পানি যদি হয়, তাহলে যে প্রফিট হোক না কেন সেটির নেট মার্জিন কিন্তু তার ডিভিডেন্ডের সঙ্গে যোগ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন ইকুইটি নিয়ে সে ব্যবসা করছে, অর্থাৎ তার শেয়ারগুলো যখন বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে তখন সে আর তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

উল্টো যারা ইকুইটি দিচ্ছে তারাও ডিভিডেন্ডের মালিক হয়ে যাচ্ছে। আর ব্যাংক কিন্তু ডিভিডেন্ডের মালিক নয়, কারণ নির্ধারিত রেটে সুদ দেওয়ার পরে বাকি যে টাকা থাকবে সেটি সম্পূর্ণই তার যদি সে সফলভাবে ব্যবসাটি করতে পারে।

ফলে এ বিষয়টিসহ আরও নানা কারণে একটি ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হয় না। বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় করপোরেট ট্যাক্স ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশকেও খুব ভালো মনে করি না। কমপক্ষে এটি ১৫ শতাংশের হলে সেটি বাজারের জন্য ভালো হবে। তখন ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে।

ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের কর্পোরেট কর হার কমানো হলেও অন্য খাতগুলোর কর্পোরেট কর হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যের অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলে থাকেন আমাদের কর্পোরেট কর হার খুব বেশি। কথাটি ঠিক নয়।

পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির (তালিকাভুক্ত) বিদ্যমান কর হার ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় যা বেশ কম। এছাড়া, আমাদের কর হার বৈশ্বিক গড় হার (২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ) এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে ব্যাংকিং খাতের কর হার কিছুটা বেশি হওয়ায় আমি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। এতে এ খাত হতে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে বলেন মুহিত।

অন্যান্য কোম্পানি করহার অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোটামুটিভাবে বর্তমান সর্বোচ্চ করহার হবে বাস্তবে ৪০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় হারটি হবে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। একমাত্র তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিরা এর চেয়ে উচ্চহারে কর দেবেন।