badugt lago দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেট-টাজেট বুঝি না। বাজার ভালো থাকুক, আমরা নিরাপদে বিনিয়োগ করি। এটাই আমাদের প্রত্যাশা । ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন আফজল হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী।

আজ দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে কথা হয় আফজল হোসেন সঙ্গে। এ সময় আরও বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী বাজেট নিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁদের কেউ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, কেউবা করেছেন নেতিবাচক মন্তব্য। আবার কেউ এটা নিয়ে ভাবতেই চান না। বাজার ভালো থাকলেই খুশি তাঁরা। যদিও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সংবাদ সম্মেলন করে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন।

আফজল হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু নেই। তারপরও মন্দের ভালো বাজেট বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু বাজেটের পর দেখা যায়, দরপতন। তাই দরপতন শুরু হলে কোনো বাজেটে কিংবা প্রণোদনায় আর কাজ হয় না। তাঁর মতে, কিছু লোকের হাতে বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা যা চায়, তা-ই হয়।

মশিউর মিয়া নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে ওঠা-নামা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাজেটকে ইস্যু করে কোনো গোষ্ঠী যাতে ফায়দা লুটতে না পারে, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।

বিনিয়োগকারী মনিরুল হাসান মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। পুঁজিবাজারে এ সুযোগ থাকলে বাজারের জন্য ভালো হতো।

আরেক বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান অবশ্য বাজেট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, বাজেটে পুঁজিবাজারে যেসব সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে যে ঘোষণা এসেছে, তা সবই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ও কোম্পানির জন্য, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাজেটে সরাসরি পুঁজিবাজারের জন্য কোনো ঘোষণা নেই। তবে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হ্রাস হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবেন, যার পরোক্ষ প্রভাব দেখা যাবে পুঁজিবাজারেও।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে আমাদের বেশ কিছু সুপারিশ ছিল, যেগুলোর বাস্তবায়ন এ বাজারের ভিত শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। আমরা একটি বিশ্বমানের স্টক এক্সচেঞ্জ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এ অবস্থায় এসব সমর্থন দরকার। অর্থমন্ত্রী বাজেটের পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করছি, চ‚ড়ান্ত বাজেট পাসের আগে আমাদের দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাবির অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন শেয়ারবাজারকে মজবুত অবস্থায় প্রতিস্থাপন করবেন, এটার কেন্দ্রবিন্দু হবে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি আহরণের জন্য।

আমরা আশা করেছিলাম করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কোনো ক্ষেত্রে উনি কমিয়ে দেবেন, যাতে করে কোনো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার একটু উৎসাহ পায়। অথচ তেমন কিছুই আমি দেখছি না। বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে অন্তত আড়াই শতাংশ বা দুই শতাংশ ট্যাক্স কমিয়ে দিলে ভালো কোম্পানিগুলো ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার জন্য নিশ্চই আসত।

আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজার এখন যে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, সেটাকে উনার (অর্থমন্ত্রীর) সঠিক জায়গায় কিভাবে স্থাপন করা যায়, এ ব্যাপারে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত ছিল। তিনি আগে বলেছিলেন, করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেটে কোনো প্রতিফলন আমি দেখলাম না।

ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোকে আড়াই শতাংশ কমিয়েছেন, এখানে যারা শক্তিশালী লবিস্ট তারা হয়তো তাদের সুবিধা বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু অন্য কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শেয়ারবাজারে যেখানে হাজার হাজার মানুষের এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ জড়িত সেদিকে নজর দেননি।

বাজেট ছাড়া বছরটি নির্বাচনেরও উল্লেখ করে ডিএসইর সাবেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাজেটে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে বুঝাতে হবে, সরকার এ খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবেন।