Dse-upমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ঈদের ছুটির পরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় বাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। গতকাল সূচকের উর্ধ্বমুখী প্রবনতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। সুদের হার কমানো, বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়ানো এবং ছোট শেয়ার নিয়ে গেম্বলিং হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারের এই উত্থান বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে লেনদেনে থাকা মন্দাভাব ঈদের পর কিছুটা কেটেছে। ঈদ ছুটির পর লেনদেন হওয়া গত সপ্তাহে চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই ঊর্ধ্বমুখী ছিল বাজার। ফলশ্রæতিতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাজার মূলধন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে চরম মন্দাবস্থা চললেও বাজার স্বাভাবিক করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোনো ভ‚মিকা লক্ষ করা যায়নি। তবে স¤প্রতি নিয়ন্ত্রক মহলের পক্ষ থেকে নেয়া নানা ধরনের উদ্যোগে অর্থাৎ একের পর এক সরকারী ঘোষণায় প্রাতিষ্ঠানিকরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, আমাদের বাজারে যারা ক্ষুদ্র ও অসেচেতন বিনিয়োগকারী রয়েছেন তারা মার্কেটের আচরণ বুঝতে পারছেনা। সকলেই বলছে শেয়ার মার্কেটের উপর সরকার নজর রাখছে। কিন্তু সরকারেরও মাথায় রাখতে হবে, যে এটা যেন শর্টটার্মের জন্য না হয়। মার্কেট যাতে দীর্ঘ মেয়াদে ভাল হয় সে চেষ্টা করতে হবে।

যারা অন্য কোন উপায় অন্তর না পেয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে তাদের জন্য একটা স্বাভাবিক মার্কেট দরকার। আর সাধারণ তথা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের খুব বেশী মূলধন নাই। তাই একবার লস খেলে তা আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আর অন্য কোন ব্যবসার সাথেও তারা ইনভলব ও হতে পারে না।

তাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। যেমন সব টাকা একবারেই বিনিয়োগ না করে সেটাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে বিনিয়োগ করে আপদকালীন সময়ের জন্য কিছু টাকা পোর্টফোলিওতে ফেলে রাখা, সূচক কমলে ক্রয় এবং ফান্ডামেন্টাল শেয়ার দেখে বিনিয়োগ করা দরকার বলেও ধারনা তাদের।

এদিকে ঈদের পর ব্যাংক মালিকদের সুদ হার কমানোর ঘোষণা শেয়ারবাজারের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করেছে। আর এর জেরেই ঈদ পরবর্তী গত সপ্তাহে উভয় শেয়ারবাজারে চার কার্যদিবসেরর মধ্যে তিন কার্যদিবসই শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেন বেড়েছে।

অথচ ঈদের আগে তারল্য সঙ্কট ও উচ্চ সুদ ঘিরে শেয়ারবাজার টানা পতনের মধ্যে ছিল। এমনকি বাজেটে ব্যাংকের করপোরেট ট্যাক্স ও তৈরি পোশাক খাতেও একই ভাবে ট্যাক কমানোর প্রস্তাবের কোন সুফলই শেয়ারবাজারে পড়েনি। তবে সরকার থেকে হুশিয়ার ছিল সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে কমানো না হলে ব্যাংকের করপোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব কার্যকর হবে না। আর এমন চাপ থেকেই ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি আগাশী ১ জুলাই থেকে ব্যাংকের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট করার ঘোষণা দেয়।

যারা এ সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুশিয়ারি দেওয়া হয়। এমন ঘোষণার পরপরই শেয়ারবাজারের সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে পুঁজিবাজারের গতি বাড়াতে অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো নমনীয় আচরণ করার তাগিদ দেয়। গভর্নরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও পুঁজিবাজার সম্পর্কিত নীতি-তে দ্রæত ছাড় দেওয়ার তাগিদ দিয়ে চিঠি দেন অর্থমন্ত্রী।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, ‘বাজেটের কোনো প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েনি। তবে সুদহার কমার কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা বেশি লাভের আশায় এখানে বিনিয়োগ করছেন। সেই সঙ্গে বিদেশিদের সক্রিয়তা বেড়েছে। তারা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন।’

তবে অন্যান্য সূত্রমতে, ‘জেড’ ক্যাটাগরির ছোট ছোট শেয়ার নিয়ে বাজার কারসাজি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ঈদ বা অন্য কোনো বড় ছুটির পরে গেম্বলাররা এই সব ছোট শেয়ার নিয়ে গেম্বলিং করে থাকেন।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা দরপতনের পর লেনদেন বৃদ্ধির ধারা বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকের শেষে এসে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধনী মুনাফা তুলে নিতে শেয়ার কেনাবেচা করে। এসব কারণে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঈদের পরে গত সপ্তাহে চার কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে লেনদেন আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত ২০ জুন ডিএসই ও সিএসইতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে; প্রায় আড়াই মাসে যা সর্বোচ্চ। এতদিন লেনদেন ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ওঠানামা করলেও গত মঙ্গলবার তা অনেক দিন পর ৬০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। গত মাসেও দৈনিক গড়ে ৪০০ কোটি টাকার কম শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল।

একাধিক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, তবে গত সপ্তাহে লেনদেন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা বা এক্সপোজার গণনা সংশোধনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লেখা অর্থমন্ত্রীর চিঠিরও ভ‚মিকা আছে। যদিও ব্যাংকের সুদহার কমানোর বিষয়ে ব্যাংক মালিকদের সিদ্ধান্তই এক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রেখেছে। তারা বলেন, ব্যাংকের সুদহার কমলে আবারও টাকা শেয়ারবাজারমুখী হবে।

একইসঙ্গে এক্সপোজার গণনা সংশোধন হলে ব্যাংকগুলো বেশি বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবে। এতে শেয়ার চাহিদা বাড়বে। শেয়ারদরে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা আরও বলেন, এরই মধ্যে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বেশ কিছু নীতি-সহায়তা এবং ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছে। যার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে।