BANK-LAGOদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:ব্যাংকগুলোর মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (এনবিএফআই) সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাৎ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। এ ছাড়া তাদের আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৭ শতাংশ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীরা এ কথা জানান।

বৈঠকে ডেপুটি গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্ব স্ব বোর্ডর সিদ্ধান্ত নিয়ে এটির (সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ) কাজ শুরু করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। তবে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে কয়েকমাস সময় লাগবে।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি মো. খলিলুর রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এ সময় দেশের আর্থিক খাতের প্রথম প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (আইপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম ও বে লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আলী খান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান এ বিষয়ে বলেন, ব্যাংকগুলোর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার নামিয়ে আনবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ব স্ব বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা বোর্ডর সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে কথা দিয়েছে।

তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিপোজিট রেট ব্যাংকের তুলনায় বেশি হলেও তাদের ঋণ-আমানতের ব্যবধান (স্প্রেড) কম। ব্যাংকগুলোর স্প্রেড চারের বেশি হলেও তাদের আড়াই শতাংশীয় পয়েন্ট। এ জন্য তাদের আমানতের সুদহার একটু বেশি হলেও ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দিয়ে ডেপুটি গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিকল্প উপায়ে অর্থ বা আমানত সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে। তাই দীর্ঘমেয়াদি অর্থ আনতে হবে। এ জন্য বন্ডের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহের জন্য পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতা করতে বলা হয়েছে।

বিএলএফসিএ’র চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে আমরা সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করতে চাই। শিল্পায়ন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্য এটি সহায়ক। এ জন্য নীতিগত সহায়তার প্রয়োজন ছিল। এটি করতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বলেন, সাধারণত ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার ১ থেকে ২ শতাংশ ব্যবধান থাকে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংক থেকে আমানত নিতে পারবে। সেটি আমরা সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে পাবো বলে আশা করছি। আমরা আমানতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ এবং ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করব।

‘আগামীকাল (বুধবার) থেকে সুদ কমানোর কার্যক্রম শুরু হবে। বাস্তবায়ন হতে কয়েকমাস সময় লাগবে। প্রথমে উৎপাদনশীল খাত, রফতানি ও এসএমই খাতে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের সুদহার কমানো হবে। স্বল্প সুদে আমানত পাওয়ার পর অন্য খাতগুলোতে ঋণের সুদহার কমিয়ে আনা হবে’ বলেন তিনি।

আইপিডিসির ফিন্যান্সের এমডি মমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘমেয়াদে সুদহার কমানোর জন্য বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার জন্য বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন। বন্ড মার্কেট শক্তিশালী হলে দীর্ঘ মেয়াদের কম সুদে ঋণ দেয়া অনেক সহজ হবে।

তিনি বলেন, এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে। হঠাৎ করে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। মেয়াদ শেষ হবার পর এটি কমিয়ে আনা হবে। ৭ শতাংশে আমানত সংগ্রহের পর ৯ শতাংশে ঋণ দেয়া সম্ভব হবে। এটি কার্যকরের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন লাগবে। খুব শিগগিরই এই অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হবে। প্রথম উৎপাদনশীল খাত এবং পরে গাড়ি-বাড়ির মতো ভোক্তা ঋণেও সুদহার কমানো হবে।

এদিকে সোমবার ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতে সুদ ৬ শতাংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে বলে গভর্নরকে জানান ব্যাংকগুলোর এমডিরা। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কিছু নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন তারা। এ সময় সুদ কমাতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে গত ২০ জুন ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ এবং ৬ শতাংশ সুদে ৩ মাস মেয়াদি আমানত নেয়া হবে।