Dragon-Sweaterমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: লাগামহীন দর বাড়ছে ড্রাগন স্যুয়েটারের শেয়ারের। এর পেছনে কারসাজি চক্র কাজ করছে। আর এ কারসাজির মুল নেতৃত্বে দিচ্ছেন কয়েকটি সিকিউরিটিজ হাউজ। আর এ কারসাজির নেপেথ্যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জড়িত বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।

তেমনি কারসাজিতে কোম্পানিটির এক প্রভাবশালী পরিচালক জড়িত বলে পুঁজিবাজারে গুঞ্জন চলছে। তার নেতৃত্বেই ৬ কার্যদিবসে ড্রাগন স্যুয়েটারের দর বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। পুঁজিবাজারে ঐ চক্রটি গুজব ছড়িয়ে যে ড্রাগন স্যুয়েটারের শেয়ার ৫০ টাকায় যাবে। এখন বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এ চক্রটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন চিহ্রিত করতে পারছেন না।

বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্রæত তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তা না হলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বড় ক্ষতির স্বীকার হবেন। মাত্র ৬ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে তালিকাভ‚ক্ত বস্ত্রখাতের কোম্পানি ড্রাগন স্যুয়েটারের দর বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। দর বৃদ্ধির কোন মূল্য সংবেদনশীল কোন তথ্য না থাকার পরও কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েই চলেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূ্ত্ের জানা যায়, গত ২ জুলাই ড্রাগন স্যুয়েটারের লেনদেন শুরু হয় ১৯.৭০ টাকা দিয়ে। ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রেতা সংকটে পড়ে হল্টেড হয়ে যায়। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩০.৯০ টাকায় নির্ধারণ হয়। গত ৬ কার্যদিবসে কোম্পানিটি ৩ দিন বিক্রেতা সংকটে পড়ে সার্কিট ব্রেকারের শেষ ধাপে উঠে যায়। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাগে ৫৬.৮৫ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১.৭৫ টাকা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.০৪ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.২৭ টাকা।

জানা যায়, ২০১৬ সালে ড্রাগন স্যুয়েটার পুঁজিবাজারে তালিকাভ‚ক্ত হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে কোম্পানিটি ৪ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৪০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। উত্তোলিত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশিন (বিএসইসি) গত মার্চ মাসে কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

এছাড়া, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বোনাস শেয়ারসহ দেদারছে উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন তারিখে কোম্পানিরি উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে শেয়ার ছিল ৪০.১১ শতাংশ। ২০১৮ সালের ৩১ মে তারিখে ১১ মাসের ব্যবধানে উদ্যোক্তা শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭.৮৪ শতাংশে।

অর্থাৎ এ সময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তারা ২.২৭ শতাংশ শেয়ার বা ৩০ লাখ শেয়ার বাজার দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, কোম্পানিটি ইতোমধ্যে ৩টি শেয়ারের বিপরীতে ১০ টাকা মূল্যে ২টি রাইট শেয়ার ঘোষণা করেছে।

কোম্পানিগুলোতে উচ্চ বিনিয়োগ ঝুঁকি রয়েছে জেনেও শেয়ার কিনছেন ক্রেতারা। কয়েক মাসের ব্যবধানে অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে ২৬টি ছাড়িয়েছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ না থাকার পরও এসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহজে মুনাফা লাভের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে আসক্ত হয়ে পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ক্রমেই এ আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ বিষয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীকেও জানতে হবে তিনি কোথায় বিনিয়োগ করছেন। লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেয়। তখন কোম্পানি বলে কোনো কারণ নেই। তখনই বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে এখানে কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও অনেকে বিনিয়োগ করছেন, এর দায় তাদেরই নিতে হবে।