BANK LAGOজ্যৈষ্ঠ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভ‚ক্ত তারকা ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা অন্যান্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে আলাদা। আর্থিক অবস্থা ভালো। মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসাবে লভ্যাংশও সন্তোষজনক। পাশাপাশি শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত, শেয়ারপ্রতি সম্পদ, শেয়ারপ্রতি আয়েও এগিয়ে রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। যে কারণে এসব ব্যাংক অভিজাত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশাও বেশি। কিন্তু স¤প্রতি ব্যাংক খাতে মন্দার হাওয়া লাগছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইবিএলসহ অন্যান্য সব তারকা ব্যাংকের গায়ে। এর জের ধরে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা।

Page-01.eps-f (4)প্রাপ্ত তথ্যমতে, এসব ব্যাংকে বিনিয়োগ করে গত এক বছরে (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরের ভিত্তিতে) বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয় ৪৩ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। গত এক বছরে ইস্টার্ন ব্যাংকে পুঁজি বিনিয়োগ করে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। বছরের একটা পর্যায়ে এ শেয়ারের দর ছিল ৫৯ টাকা, পরে যা ৩১ টাকায় নেমে এসেছে। এদিকে সিটি ব্যাংকে বিনিয়োগ করে লোকসান হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এক বছরের মধ্যে এই শেয়ারদর সর্বোচ্চ ৫৭ টাকা ৩০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ৩১ টাকায় কেনাবেচা হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, অনেকদিন ধরে মার্কেট কারেকশন হচ্ছে, যে কারণে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতে। তাছাড়া গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর কিছুটা বেড়ে পরে সেই দর কমে গেছে। অন্যদিকে আগের চেয়ে অধিকাংশ ব্যাংকের পারফরম্যান্স কমে গেছে। দর কমার এটাও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। তবে আশা করা যায় খাতটি এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে।

গত এক বছরে অন্য প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ওঠানামা করে ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২২ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে। যারা এই দরে শেয়ার কেনাবেচা করেছেন তাদের প্রতি শেয়ারে লোকসান হয়েছে ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে গত এক বছরের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়, একটা সময় যা ৬৫ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে।

অর্থাৎ ১১৪ টাকা ৪০ পয়সায় কিনে যারা ৬৫ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি করেছেন তাদের লোকসান হয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভুক্তভোগীদের লোকসান হয় ৪৩ শতাংশ। এক বছরের মধ্যে এ শেয়ার সর্বোচ্চ ১৭৮ টাকা ২০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। বর্তমানে তালিকাভুক্ত প্রায় সব ব্যাংকের শেয়ারদর সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।

অন্যদিকে এসব তারকা ব্যাংকে বিনিয়োগ করেও প্রতিনিয়ত লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। কাজে আসছে না মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কোনো সমীকরণ। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মৌলভিত্তির কোম্পানি বিবেচনা করে এক বছর আগে ৩০ লাখ টাকার সিটি ব্যাংকের শেয়ার কিনি। এখন সেই পুঁজি নেমে এসেছে ১৭ লাখ টাকায়। লাভের বদলে প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব করতে হচ্ছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ প্রদানের হার লক্ষ করলে দেখা যায়, সর্বশেষ বছরে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লভ্যাংশ প্রদান করে নগদ ৩০ শতাংশ করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত লভ্যাংশের হার এক দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই সময় ইবিএল শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃত লভ্যাংশ আসে তিন দশমিক ৯১ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংক এই সময়ে ২৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার প্রদান করে।

অন্যদিকে সর্বশেষ বছরে সিটি ব্যাংক লভ্যাংশ দেয় মোট ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে নগদ পাঁচ ও ১৯ শতাংশ বোনাস শেয়ার। এই প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ আসে তিন দশমিক ৫৭ শতাংশ করে। অন্য প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয় ১০ শতাংশ করে, যেখানে প্রকৃত লভ্যাংশের হার ছিল দুই দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, একটি সেক্টর যখন খারাপ করে তখন ওই সেক্টরের ভালো কোম্পানিতেও এর প্রভাব পড়ে। স¤প্রতি ব্যাংক সেক্টরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও নিম্নমুখী রয়েছে।