agni systemদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা জারি আছে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে অর্থ্যাৎ ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছিল। অনেকেই এ নির্দেশনার পরিপালন না করায় বিএসইসি সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি মৌখিকভাবে সতর্ক করে যাচ্ছে।

আর এরই প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আইটি খাতের কোম্পানি অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির সম্মিলিত শেয়ার ধারনের পরিমান বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কোম্পানিটির একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে কোম্পানিটির পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১১.৪০ শতাংশ। যা বিএসইসির নির্দেশনার পরিপন্থী। এরই প্রেক্ষিতে বিএসইসির পক্ষ থেকে কোম্পানিটিকে বেধে দেয়া শর্ত পরিপালনে একাধিকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যা বিদ্যমান পরিচালকদের সামর্থের বাহিরে।

আর এ কারণেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ যোগ্য পরিচালকের সন্ধানে উঠেপড়ে লেগেছেন। দায়িত্ব্যও দেয়া হয়েছে বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে। তবে যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকেই নেয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। যা কোম্পানিটির ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক।

এ বিষয়ে অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোঃ শরিফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে বোর্ডে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তখনই বলতে পারবো। তবে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালনে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের এমন তোড়জোড়কে স্বাগতম জানিয়েছেন।

তাদের মতে, এতে শুধুমাত্র বিএসইসির নির্দেশনাই পরিপালন হবে না, বরং যোগ্য পরিচালক খুজে বের করতে পারলে কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত হবে। কারণ, যারাই এখানে বিনিয়োগে আসবেন, তারা তাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজি থেকে মুনাফা উপার্জনে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রনয়নে জোর ভূমিকা পালন করবেন। এতে শুধুমাত্র কোম্পানির মুনাফাই বাড়বে না, পক্ষান্তরে লাভবান হবেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে,
এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ২০০৩ সালে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২১.২০ টাকা। কোম্পানিটি গত ৫ বছরে ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশ করে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে।

৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার ১৩৬টি। এরমধ্যে ৩০ জুন ২০১৮ শেষে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের হাতে ১১.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২০.৬৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৭.৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত এক বছরে এ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারনের পরিমাণ বেড়েছে ৯.৯১ শতাংশ।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ৪৫টি উদ্যোক্তা-পরিচালকরা নিজ নামে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করছেন। তবে এককভাবে ২ শতাংশের কম শেয়ার নিয়ে এখনও কেউ পরিচালক পদে আছেন কি-না, সে তথ্য জানা যায়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা নিজ নামে অল্প পরিমাণ শেয়ার ধারণ করলেও বেনামে বিপুল পরিমাণ শেয়ার ধারণ করছেন। শেয়ার কেনাবেচা থেকে বড় অঙ্কের মুনাফা করাই তাদের মূল্য উদ্দেশ্যে।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, নির্দেশনা লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কমিশন সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর শেয়ারের ক্রেতা সংকটে লেনদেন আশঙ্কাজনক হারে কমছিল। ওই পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশনাটি জারি হয়েছিল। তাছাড়া কোনো কোম্পানির পর্ষদ যাতে প্রকৃত অর্থে শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধিত্বশীল হয়, সেটিও নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য ছিল।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার আইপিও পরবর্তী ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনায় সংশোধনী এনেছে বিএসইসি।

সংশোধনী অনুযায়ী, উদ্যোক্তা/প্রবর্তক ও পরিচালকদেরকে সম্মিলিতভাবে আইপিও অনুমোদনের পরবর্তী ৩ বছর কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে হবে। তবে আগের নির্দেশনায় পরিচালকরা এই শর্তের বাহিরে ছিল।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসইসির এ ধরনের উদ্যোগ বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ কোম্পানির পরিচালকরা যদি বেশি শেয়ার ধারণ করেন তখন কোম্পানির উন্নয়নে তাদের তাগিদও বেশি থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্তির পর বেশিরভাগ শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডাদের হাতে ছেড়ে দেন। মালিকানা কমে যাওয়ায় পরিচালকরাও কোম্পানির অগ্রগতির ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। এসব কোম্পানির বেশিরভাগই লোকসানী হয়ে পড়ে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই বিএসইসি ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।