bsrm-blbrd-2দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকভ‚ক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিএসআরএম লিমিটেডের বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়েই চলেছে। ২০১৭ সালে কোম্পানিটিতে বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকেই তাঁরা ক্রমাগত শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন। গত নয় মাসে এ কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশি শেয়ারহোল্ডাররা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং ও পাকিস্তানের ১২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম লিমিটেডের প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় করেন। এর পরিমান ছিল কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এরমধ্যে কানাডার আলি আসগর বদরুদ্দিন, আরব আমিরাতের শফিউদ্দিন আনওয়ালা, আব্বাস জুমানি ও ভরটেক্স ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড ও পাকিস্থানের ইকবাল হোসেইন প্লেসমেন্ট শেয়ারের প্রায় ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ পান।

এর বাইরে পাকিস্থানী কয়েকজন নাগরিকের কাছে সামান্য প্লেসমেন্ট শেয়ার ছিল। জানা গেছে, ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে সামান্য প্রিমিয়ামে এসব প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেন বিদেশীরা, যা তালিকাভুক্তির পর বেড়েছে সাত গুনেরও বেশি। ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর কমিশন বিএসআরএম লিমিটেডের আইপিওর অনুমোদন দেয়।

সে সময় এ কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩৫ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বাড়তে থাকায় এ কোম্পানির শেয়ার দর নিয়মিত বাড়তে দেখা গেছে। আর শেয়ার বিক্রি করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও আকাশচুম্বি মূলধনী মুনাফা পাচ্ছেন। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে বিদেশীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ারের মধ্যে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারন লেনদেন ব্যবস্থায় (উন্মুক্ত বাজার) বিক্রি করেছেন।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে এ কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ১৪৬ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। বিদেশীরা তাদের প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি শুরুর পর থেকেই এর শেয়ার দরে নিম্মমুখি প্রবনতা দেখা দিয়েছে। গত ছয় মাসে বিএসআরএম লিমিটেডের শেয়ার ৯১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১৬ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।

যদিও সদ্য শেষ হওয়া হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করেছে। আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় সদ্য শেষ হওয়া হিসাব বছরে কোম্পানির মুনাফা প্রায় ৮৭ শতাংশ বেড়েছে।  ২০১৭ সালে হিসাব বছর শেষে বিদেশীদের হাতে এ কোম্পানির ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৭টি শেয়ার ছিল, যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বিদেশীরা মূলত এ কোম্পানির প্লেসমেন্টধারী ও সাধারন শেয়ারহোল্ডার। তিন বছরের বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা (লক-ইন) শেষ হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। এরপর থেকেই এসব বিদেশীরা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। চলতি বছরের জুন মাস শেষে এ কোম্পানিতে বিদেশীদের শেয়ার ধারণের পরিমান নেমে এসেছে ২১ দশমিক ২৯ শতাংশে।

এ বিষয়ে বিএসআরএম গ্রæপ সিএফও ও বাংলাদেশ স্টীল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি শেখর রঞ্জন কর বলেন, বিদেশীরা এ কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী। একই সঙ্গে তারা সাধারণ শেয়ারহোল্ডার। তাদের শেয়ার বিক্রিতে কোন ঘোষণার প্রয়োজন নেই। বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় শেয়ার বিক্রিতে কোন বাধাও নেই। যেহেতু বিদেশীদের বিক্রি করা শেয়ার দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিনছেন, তাই মুনাফার বড় অংশ দেশেই থেকে যাবে।

চলতি হিসাব বছর শেষ হওয়ায় বিএসআরএম লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন। সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে কোম্পানির বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩১ কোটি টাকা বেশি।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। সদ্য শেষ হওয়া হিসাব বছরে সহযোগি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। ফলে তৃতীয় প্রান্তিকে করপরবর্তি নিট মুনাফা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি।

বিএসআরএম লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ২১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ১৬ দশমিক ৫৩ শথাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অবশিষ্ট ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশীদের হাতে। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সে সময় আইপিওতে কোম্পানিটি ১ কোটি ৭৫ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে।