desh-protikhon-logo-websiteদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক কাদের হাতে এ প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। তাছাড়া বর্তমান বাজারে কারসাজি চক্র বেপরোয়া ভাবে শেয়ারের দর বাড়ালেও বিএসইসি কোন ভুমিকা নিচ্ছে না, বরং নিরব ভুমিকা পালন করছেন।  বর্তমান মার্কেটের চিত্র একটু ঘোলাটেই বটে।

মার্কেট যে নিজ গতিতে না চলে কারো ইশারায় চলছে সে বিষয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাজার বিশ্লেষকরা অব দ্য রেকর্ডে তাদের মতামত জানিয়েছেন। নাম না জানা চক্রের সদস্যরা এতোই শক্তিশালী যে তারা যেদিকে যায় গোটা মার্কেটটাই সেদিকে যায়। তারা চাইলে বাজারকে উঠাবে,চাইলে মার্কেটকে ফেলবে।

একসময় মার্কেট অ্যানালাইটিক্যাল রিপোর্টগুলো পাওয়ারফুল এন্টিবায়োটিকের মতো কাজ করলেও আজ এগুলো জাষ্ট ওয়াষ্ট অব পেপার। কারণ অ্যানালাইসিসের সঙ্গে মার্কেট চিত্রের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

মুন্নু সিরামিকস দ্বিগুণ উৎপাদন বাড়াবে। যেকোনো জিনিষ ডাবল প্রডাকশন করতে হলে সে অনুযায়ী মেশিন প্রতিস্থাপন করতে হয়। উৎপাদন চালু করা, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কার্যক্রমে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। এতে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় লেগে যায়। আর পণ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করলেই যে মার্কেটে দ্বিগুণ বিক্রি হবে বিষয়টাতো তাও নয়। অথচ যে কোম্পানির থেকে ফল আসবে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সেই ফল বীজ না লাগাতেই খেয়ে নিতে চাইছে কেউ কেউ।

২০১০ সালে যখন শাইনপুকুর সিরামিকস শেয়ার বাজারে এসেছিল তখন ওরা প্রডাকশন দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেয়। দেখা গেছে, প্রডাকশন দ্বিগুন করার পর তাদের ইপিএস মাইনাসে চলে এসেছে। কারণ প্রডাকশন দ্বিগুণ করার জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে লোনের প্রয়োজন হবে। সেই লোনের টাকা সঙ্গে লোনের সুদ পরিশোধ করে আর মুনাফার চেহারা দেখা সম্ভব হয়নি। এখন মুন্নু সিরামিকসের ক্ষেত্রেও যে এমনটি হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আসলেই হলো। কিন্তু বর্তমান মার্কেটে এ কোম্পানিকে ঘিরে যা চলছে তাতে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা টাকার পাহাড় বানালেও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী এমনভাবে অতলে পড়বে যে এর থেকে আর বের হতে পারবে না। কারণ প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ মানেই সবাই লাভ করবে না। কাউকে না কাউকে লস বহন করতে হবে।

ক্যাপিটাল বাড়ানোর নিউজে মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের অবস্থান এখন আকাশ ছোয়া। মালিকানা পরিবর্তনের গুজবে ২৬ টাকার লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দর আজ ১৭০ টাকা ছুঁইছে। আজিজ পাইপসের শেয়ার প্রতি নেট সম্পদ মূল্য ৫৩.৭১ টাকা মাইনাস।

যে কোম্পানির সম্পদ মূল্য বলতে কিছুই নেই বরং কোম্পানি ঋণের তলে নিমজ্জিত সে কোম্পানির ৫ শতাংশ বোনাস ইস্যুর নিউজে শেয়ার দর ৫৪ টাকা থেকে এখন ২৫০ টাকার ওপরে লেনদেন করছে। নিজস্ব কোনো উৎপাদন ছাড়া,মাত্র একটি বিল্ডিং ভাড়া দিয়ে চলা দুর্বল মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার দর আকাশচুম্বী হয়ে রয়েছে। তেজগাওঁতে অবস্থানরত আরেকটি সিএনজি পাম্প স্টেশন চালানো কোম্পানি যাদের নিজেদেরই চলতে খুব কষ্ট হয় সেই বিডি অটোকার্সের শেয়ার দর ২৬ টাকা থেকে শুরু করে এখন ৩৭০ টাকায় চলে গেছে।

শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলাসহ এরকম আরো অনেক কোম্পানির উদাহরণ রয়েছে যেগুলোর ভিত বলতে কিছুই নেই। অত্যন্ত দুর্বল মৌলভিত্তির হওয়া স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র মালিকানা পরিবর্তনের গুজব ছড়িয়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর আকাশচুম্বী করা হয়েছে।

এসব দেখার জন্য জন্য বিএসইসির ইন্সট্যান্ট মার্কেট ওয়াচ সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সফটওয়্যারটি কোনো কারিগরি ত্রুটির মধ্যে রয়েছে কিনা কিংবা এটি যাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হচ্ছে তাদের চোখে সমস্যা রয়েছে কিনা সে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না।

এখন বাজারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে সেদিকে না গিয়ে মার্কেটে যেসব কোম্পানির পিই রেশিও কম, ভালো ফান্ডামেন্টাল, বিনিয়োগ ঝুঁকি অত্যন্ত কম, যেগুলোর শেয়ার দর তলানিতে পড়ে রয়েছে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।