delisting-1দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন উৎপাদনে না থাকা এবং শেয়ার নিয়ে প্রায়শই কারসাজি হওয়ার কারণে গতকাল বুধবার দুই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত (ডি-লিস্টেড) করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানি দুটি হলো- রহিমা ফুড করপোরেশন এবং মডার্ন ডায়িং ও স্ক্রীন প্রিন্টিং লিমিটেড। ডিএসই দাবি করছে, এতে বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। তবে সেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লাখ বিনিয়োগকারী।

এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদৌ ফিরে পাবেন কি-না, এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা। যদিও ডিএসই বলছে, দীর্ঘদিন উৎপাদনহীন এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে প্রায়ই কারসাজি হয়ে থাকে, এতে বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। আর এ কারণে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

তাদের মতে, কোম্পানি দুটির উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলেও তার কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসই। কোম্পানি দুটির মধ্যে রহিমা ফুডের উৎপাদন প্রায় দেড় যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে। আর মডার্ন ডায়িংয়ের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে প্রায় আট বছর যাবৎ।

অথচ আইন অনুযায়ী কোন কোম্পানি তিন বছর বা তার বেশি সময় উৎপাদন বন্ধ রাখলে স্টক এক্সচেঞ্জ সে কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করতে পারে। কিন্তু ডিএসই তা করেনি। আর এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আতাত করে নানাভাবে শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে একটি চক্র বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত দুই বছরে রহিমা ফুডের শেয়ার দর ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আর মডার্ন ডায়িংয়ের শেয়ার দর ১৭৭ টাকা থেকে ৩৯৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। অথচ ওই সময়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে লিস্টিং রেগুলেশনের বেধে দেয়া ছক অনুযায়ী দর বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া ছাড়া আর কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

শুধু তাই নয়, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ছাড়াও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নানা রকম আইন লঙ্ঘণের অভিযোগ ওঠলেও ডিএসই ছিল নিশ্চুপ। এমনকি রাতের আধারে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনসহ পরিচালকদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি হয়ে গেলেও ডিএসই ছিল অন্ধকারে। অবশ্য এ নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছিল দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ’। দুঃখজনক হলেও সত্য তাতেও যেন ঘুম ভাঙ্গেনি ডিএসইর। তবে হঠাৎ করে ডিএসই’র এমন সিদ্ধান্তকে মধু সংগ্রহের পর মৌ-চাক ভেঙ্গে ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডাররা।

জানা গেছে, রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইংকে ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই এ দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আজ থেকে ডিএসইতে লেনদেন না হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমান অর্থ এ দুই কোম্পানিতে আটকে গেছে। তবে রহিমা ফুডের শেয়ার বিক্রি করে টাকা বের বের করার কিছুটা সুযোগ থাকলেও মডার্ন ডাইংয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোন সুযোগই থাকছে না।

কারণ রহিমা ফুডকে ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুত করা হলেও সিএসইতে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আর এ কারণে আজ যথাসময়েই সিএসইতে লেনদেন হবে। যেসব বিনিয়োগকারীর সিএসইতে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তারা রহিমা ফুডের শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন। যেহেতু মডার্ন ডাইং সিএসইতে তালিকাভুক্ত নয় তাই এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না।

জানা যায়, কোম্পানিগুলোর ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ চাইলে ওটিসি মার্কেটে থাকতে পারে। ওটিসি থেকে পরবর্তিতে প্রয়োজনীয় আইন পরিপালন করলে মূল মার্কেটে ফিরতে পারবে। আর না চাইলে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি টানা ৩ বছর উৎপাদনে না থাকলে সেটিকে তালিকাচ্যুত করতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। তবে রহিমা ফুডের মালিকানা যেহেতু সিটি গ্রুপের কাছে রয়েছে তাই সিটি গ্রুপ কোম্পানিটিকে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত করিয়ে নিতে পারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়ভার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর। কেউই এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সুতরাং পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়-দায়িত্ব সবার কাঁধেই পড়ে। কিন্তু তালিকাচ্যুতিই কি উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উত্তম পথ হতে পারে? তালিকাচ্যুত হলে কোম্পানির কি অসুবিধা হবে, ক্ষতির মুখে পড়বে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।

তাঁদের মতে, যেকোন কোম্পানির উৎপাদন অপরিহার্য কারণে সাময়িক বন্ধ থাকতেই পারে। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোকে যথাসময়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা কিংবা সেসব কোম্পানির কর্মকান্ডের মনিটরিং করার দায়িত্ব বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর। তারা যদি সঠিক দায়িত্ব্য পালন করে তাহলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এভাবে পদদলিত হবে না।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে বিধায় তাঁরা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে তালিকাচ্যুতির যে পথে এগুচ্ছে, তা পুঁজিবাজারের জন্য শুভ নয়।

তারা অভিযোগ করছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের খামখেয়ালীপনার কারণে বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে উৎপাদনের বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে রহিমা ফুডের শেয়ার হস্তান্তরসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের না জানিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছিল। কিন্তু বিএসইসি ও ডিএসইর পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা ব্যবস্থা নেয়ার মতো হাকডাক ছাড়া আর কোন উদ্যোগই নিতে দেখা যায়নি। রহিমা ফুডের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন হলেও তা নিয়ে অন্ধকারে আছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

যেকোন কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে ডিএসই’র ওয়েবসাইটকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ধরে নেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, সেজন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গৃহীত যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ২৪ ঘন্টার মাধ্যমে ডিএসইকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর ডিএসইও তথ্য প্রাপ্তির ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অবহিত করে।

তবে রহিমা ফুডের তথ্য গোপনের দায় কার- তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। কারণ কোম্পানির ওয়েবসাইটে পরিবর্তিত পরিচালনা পর্ষদের তথ্য যোগ করা হলেও ডিএসই’র ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোন তথ্যই উপস্থাপিত হয়নি।

কোম্পানিটি দাবি করছে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং তা ডিএসইকেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ডিএসই দাবি করছে, তারা রহিমা ফুডের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন তথ্য সম্পর্কে অবগত নন। এ বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে ডিএসইকে কোন কিছুই জানানো হয়নি।

কোম্পানির ওয়েবসাইটে চেয়ারম্যানের নাম হিসেবে ফজলুর রহমানের নাম রয়েছে। যিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব্য পালন করছেন।

এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছে এমডি. হাসানের নাম। তিনিও সিটি গ্রুপের পরিচালক। অন্যদিকে, পরিচালক হিসেবে হামিদা রহমান ও ফারজানা রহমানের নাম রয়েছে। অথচ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব্যে থাকা যেসব ব্যক্তিদের চিনতেন, তাদের কেউ এখন দায়িত্ব্যে নেই। কিভাবে- তা কারোরই বোধগম্য নয়।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির এমন কোন তথ্য বা পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গৃহীত এমন কোন সিদ্ধান্ত, যা কোম্পানির আয়-ব্যয় কিংবা শেয়ার দরকে প্রভাবিত করতে পারে, সেটাকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সেটা জানার অধিকার কোম্পানি সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের রয়েছে।

আর এই কারণে কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীদের অবহিত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু রহিমা ফুডের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের তথ্য প্রদানে এ আইনের কোন পরোয়াই করা হয়নি।

প্রশ্ন উঠছে, কার স্বার্থে এবং কেন পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মূল্য সংবদেনশীল তথ্যটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছে? এতে কি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ জড়িত নাকি ডিএসইর অসাধু কর্তা-ব্যক্তিরা। নাকি উভয় কর্তৃপক্ষই জড়িয়ে পড়েছে কোন সুবিধাভোগী ব্যবসায়!

এ বিষয়ে জানতে রহিমা ফুডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শহিদুর রহমান জানিয়েছিলেন,  বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং যথা সময়ে তা ডিএসইকেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু ডিএসই কি কারণে তা প্রকাশ করেনি, তা আমি বলতে পারবোন না।’ কতোদিন আগে ডিএসইকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল-এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুর রহমান জানান,

আমি এখন অফিসের বাহিরে আছি। তাই সঠিক সময়টা বলতে পারছি না। তবে তা দুই-তিন মাসের কমও হয়নি’ বলে তিনি ধারণা দেন। অন্যদিকে কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দীর্ঘ সময়েও প্রকাশ না করার কারণ জানতে চাইলে ডিএসই জানিয়েছিল,

কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। রহিমা ফুডের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন তথ্য আমাদেরকে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

যদি এ ধরনের কোন তথ্য আমাদের হাতে থাকতো তাহলে আমরা অবশ্যই তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতাম।’ অথচ এরপর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে ডিএসই কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।  এর আগেও রহিমা ফুডের শেয়ার সিটি গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে ডিএসই ও রহিমা ফুডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছিল।

বিষয়টি নিয়েও দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে ডিএসই’র পক্ষ থেকে কোম্পানির কাছ থেকে কারণ জানতে চাইলে ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। ডিএসইর ওয়েবসাইটেও তা একইদিন প্রকাশিত হয়েছে।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, পরের দিন কোম্পানির কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদের হাতে থাকা সব শেয়ার সিটি গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের ঘোষণা দেয় এবং ওইদিন তা ডিএসইকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু ডিএসই তা প্রকাশ না করে পরের দিন ১৭ অক্টোবর পুনরায় ১৫ অক্টোবরের নোটিশটি প্রকাশ করে। যা বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কিন্তু তদন্তের ফলাফল আজও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা জানতে পারে নাই।

এদিকে আইন অনুযায়ী কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরে ঘোষণা দিতে হয়। যা এ কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হয়নি। বিএসইসি বলছে, এটা আইনের লঙ্ঘন। কারণ, উল্লেখযোগ্য শেয়ার ক্রয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। রহিমা ফুডের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরের অনুমতি নেওয়া বাধ্যবাধকতা আছে, যা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জারি করা এক নির্দেশনা অনুযায়ী জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। সিটি গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেন, আইন-কানুন মেনেই শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে মডার্ন ডায়িংয়ের। এমনকি এই সময় যন্ত্রপাতিও বিক্রি করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালের শেষদিকে ডিএসইর একটি প্রতিনিধি দর কোম্পানিটির কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এসব তথ্য ওঠে আসে। ওই সময় ডিএসই জানিয়েছিল, ডিএসইর একটি প্রতিনিধিদল মডার্ন ডায়িং কারখানা পরিদর্শন করে। পরে দলের সদস্যরা এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে মডার্ন ডায়িংয়ের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরপরই উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত সব যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণ তৃতীয় পক্ষের কাছে ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল ভিত্তিতে) লিজ দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালের ৩ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) এসব বিষয় পাস করা হয়েছে। তবে ওই সময় এ বিষয়ে ডিএসই কিংবা বিএসইসিকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।