Rejent-textile lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের কাছেই এখনো জিম্মি শেয়ারবাজার। চিহ্নিত এই কারসাজি সিন্ডিকেট কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। দিনের পর দিন একই ধরনের শেয়ার কারসাজি করে চলছে। আর এ কারসাজির মুল হোতা কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজ। এ হাউজটি একের পর এক কারসাজি করে চলছে। তার কোন নিয়ম কে তোয়াক্কা করছে না।

প্রতিকারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও কোনো কিছুই করতে পারছে না। মামলা, জরিমানা করার পরও তাদের কারসাজি থামছে না। পুঁজিবাজারে এখন এদের পরিচয় শেয়ার কারসাজির মাফিয়া সিন্ডিকেট হিসেবে। এই সিন্ডিকেটের হাউজের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা জড়িত।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলার বিচার না হওয়ায় বেপরোয়া এসব ব্যক্তি। জালিয়াতি, কারসাজি থামাতে হলে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পেলে এদের আজীবন নিষিদ্ধ করা উচিত।

বর্তমান পুঁজিবাজার শক্তিশালী সিন্ডিকেট খেলছে। তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো বাজার। বিষয়টি সরকারের গোচরে থাকলেও এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার একের পর এক উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি। ফলে গত দুই মাস ধরে ১৫ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজিতে লিপ্ত কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র।

এরা পুঁজিবাজার থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এর সাথে শীর্ষ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। এরা পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এসব ষড়যন্ত্র শুরু করছে।

desh-protikhonআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোনো অসাধু চক্র পুঁজিবাজার নিয়ে আবার কারসাজিতে মেতে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ব্রোকারেজ হাউজের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

১৯৯৬ কিংবা ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন কোনোভাবেই না ঘটে সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাবে সৃষ্টিতে পুঁজিবাজার কারসাজির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা বলেছেন, সরকারের প্রতিটি সংস্থাকে সজাগ থাকতে হবে।

বিশেষ করে পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেন কোনো কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত না হয়। এতে যেন কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে। এমনকি প্রযুক্তিগত দিকগুলোও নজরে রাখতে বলা হয়েছে।

সামনে ডিভিডেন্ড ঘোষনাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র খাতের রিজেণ্ট টেক্সটাইল কোম্পানিটির শেয়ারদরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে ‘অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বিনিয়োগকারীদের এই শেয়ারের আগ্রহের নেপথ্যে রয়েছে কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজের অস্বাভাবিক ক্রয়াদেশ বা শেয়ার কেনার চাহিদা।

regent tex 1 monthঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এদিন কোম্পানির শেয়ার আগের দিনের চেয়ে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বা ২ টাকা ১০ পয়সা বেড়েছে। কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ২৩ টাকা ৩০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের দায়িত্বশীলরা না জানলেও শেয়ারদরের উলম্ফনের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রের তথ্যমতে,  কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার ইচ্ছায় শেয়ারদর বাড়ছে। বড় বড় পোর্টফোলিওতে রিজেন্ট টেক্সটাইল কিনছে।

তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার কিনে রেখেছেন। তাই ‘দৃশ্যমান কিংবা অপ্রকাশিত’তথ্য না থাকলেও তার ইচ্ছাতেই রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বাড়ছে। কয়েক মাস আগে কম দামে শেয়ার কিনে দর বাড়াচ্ছে তারা।  যে কোন সময় তারা বেরিয়ে যেতে পারে-এমন তথ্যও মিলেছে।

অবশ্য ‘রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বৃদ্ধির নেপথ্যের কারসাজি রয়েছে কি না সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও মোতালেব চৌধুরী

এ বিষয়ে আলাপকালে রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব রিয়াজুল হক শিকদার দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘শেয়ারদর হঠাৎ কেন বাড়ছে কিংবা শেয়ার নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আর শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে যে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

তাই এ মুহূর্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারণ মিথ্যা তথ্য, কারো প্ররোচনা কিংবা গুজবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।’

উল্লেখ্য, কারসাজির অভিযোগ থাকায় কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ এবং এর গ্রাহকদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত কয়েক মাসে কারসাজি করে একের পর এক শেয়ারের দর দ্বিগুণ থেকে সাত গুণ পর্যন্ত করার ক্ষেত্রে এ ব্রোকারেজ হাউসের সম্পৃক্ততার খবর এখন শেয়ারবাজারে অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে যাওয়ায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সূত্র জানায়, একক কোনো ব্রোকারেজ হাউসের কারসাজি খতিয়ে দেখতে এটাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রথম উদ্যোগ। তবে শুধু ব্রোকারেজ হাউসটিই নয়, কমার্স ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগও খতিয়ে দেখবে কমিটি। এরই মধ্যে ব্রোকারেজ হাউসটির সিইও মোতালেব চৌধুরী, এভিপি জহিরুল ইসলাম মণ্ডল ও সাইফুল ইসলাম, এফএভিসি ইশতিয়াক হোসেনসহ শীর্ষ দশ কর্মকর্তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএসইসি।

এ ছাড়া কমার্স ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সাইফুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হালিম তথ্যও সংগ্রহ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর কিউ এম ফোরকান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, আমাদের ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার কেনাবেচায় কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা খতিয়ে দেখা হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের নজর থাকে স্বল্প মূলধনি ও কম শেয়ার রয়েছে এমন কোম্পানির দিকে। কারণ এসব কোম্পানি অপেক্ষাকৃত কম পুঁজি নিয়ে তারা গেম করতে পারে। আর তাদের ফাঁদে পা দেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ব্যাপারে বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এদিকে বিষয়টি জানতে বিএসইসিতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে মাঝেমধ্যে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া কর্মাস ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউজ আমরা চিহ্রিত করছি।

বিষয়টি নিয়ে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, শেয়ারবাজারে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি কারসাজিতে জড়িত। তবে কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজের নাম ইদানিং খুব শোনা যাচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে কঠোর না হলে তারা থামবে না। শুধু জরিমানা করে এদের ঠেকানো যাবে না। প্রয়োজনে শেয়ারবাজারে কাউকে নিষিদ্ধ করতে হবে।