bank-(2)জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বছরের প্রথমার্ধে জানুয়ারি-জুন সময়ে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের নিট মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয়ে (ইপিএস) মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সমান ১৫ ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে বা কমেছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় ৩০ ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়েছে আড়াই শতাংশ। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের ইপিএস ও শেয়ারসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে করা পর্যালোচনায় এমন চিত্র মিলেছে।

পর্যালোচনার তথ্য দেখা গেছে, লাভ-লোকসান উভয় দিক বিবেচনায় নিলে বছরের প্রথম ছয় মাসে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। আবার বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকের মতো সর্বশেষ এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকেও ব্যাংকগুলোর মুনাফার চিত্র ছিল প্রায় একই রকম। এ সময়ে ১৬ ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে, কমেছে ১৪টির।

তবে এ প্রান্তিকে কয়েকটি ব্যাংকের নিট মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক নিট মুনাফা বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশেরও বেশি। গত প্রান্তিকে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে। গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় যা প্রায় ২০২ কোটি টাকা বেশি। ওই প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর সাকল্যে নিট মুনাফা ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা।

অর্ধবার্ষিক :বরাবরের মতোই এবারও লোকসানে ছিল শুধু আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং এটির শেয়ারপ্রতি লোকসান আরও বেড়েছে। এর বাইরে ১৪ ব্যাংক মুনাফা করলেও গত বছরের তুলনায় কমেছে। অন্য ১৫ ব্যাংকের মুনাফা ও ইপিএম বেড়েছে।

ইপিএস ও মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, ব্যাংক এশিয়া, ন্যাশনাল, যমুনা, সাউথইস্ট, ব্র্যাক, প্রিমিয়ার, সোশ্যাল ইসলামী, এনসিসি, ডাচ্-বাংলা, ঢাকা, শাহ্জালাল ইসলামী, মার্কেন্টাইল ও ইসলামী ব্যাংক।
এর মধ্যে সর্বাধিক মুনাফা বেড়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি নিট ৮৭ কোটি টাকা মুনাফার তথ্য দিয়েছে, যা গত বছর ছিল প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১৩১ শতাংশ। অর্থাৎ নিট মুনাফা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ইপিএসও ৭৪ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫২ পয়সা হয়েছে। মুনাফায় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চলতি বছর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পূবালী ব্যাংক। ব্যাংকটির নিট মুনাফা ১০৯ কোটি টাকা থেকে ২১৬ কোটি টাকা এবং ইপিএস ১ টাকা ১৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।

মুনাফা বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হালিম চৌধুরী জানান, ঋণ প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করায় এ বছরের জুনে মন্দ ঋণ বাড়েনি, ফলে নতুন করে এক টাকাও মূলধন সংরক্ষণ (প্রভিশনিং) করতে হয়নি। তিনি বলেন, মন্দ (ক্ল্যাসিফাইড) ঋণের পরিমাণ মোটের মাত্র ১ দশমিক ৬২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এমনকি এর বিপরীতে অতিরিক্ত ৭০ কোটি টাকা বেশি প্রভিশনিং করা আছে। প্রভিশনিংয়ে গত দু-তিন বছরে কোনো ফাঁকি-ঝুঁকি না করার সুফল এখন মিলছে।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্যাংক এশিয়ার নিট মুনাফা ৬৮ কোটি টাকা থেকে ১২১ কোটি টাকায় এবং ইপিএস ৬৯ পয়সা থেকে ১ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। যেসব ব্যাংকের নিট মুনাফা ও ইপিএস কমেছে, সেগুলো হলো: ওয়ান, স্ট্যান্ডার্ড, এক্সিম, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, ট্রাস্ট, এবি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, উত্তরা, সিটি, আইএফআইসি, ইস্টার্ন, রূপালী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, প্রাইম ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

এর মধ্যে সর্বাধিক মুনাফা কমেছে ওয়ান ব্যাংকের। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ১৩২ কোটি টাকা। এ বছর একই সময়ে তা ৩১ কোটি টাকার নিচে নেমেছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি। ইপিএস ১ টাকা ৮১ পয়সা থেকে এ বছর নেমেছে মাত্র ৪০ পয়সায়।

মুনাফা কমায় এর পরের অবস্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বছরের প্রথম ছয় মাসে মাত্র পৌনে নয় কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩৩ কোটি টাকার বেশি। ব্যাংকটির ইপিএস ৪২ পয়সা থেকে ১০ পয়সায় নেমেছে।

একইভাবে এক্সিম ব্যাংকের নিট মুনাফা ৬২ কোটি টাকা থেকে ১৮ কোটি টাকায় এবং ইপিএস ৪৪ পয়সা থেকে ১৩ পয়সায় নেমেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিক :সর্বশেষ প্রান্তিকে নিট মুনাফা বেড়েছে ১৬ ব্যাংকের। এরা মোট প্রায় ১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৬১ কোটি টাকা। মুনাফা বেড়েছে ৪০ শতাংশ।

এর মধ্যে সর্বাধিক মুনাফা বেড়েছে প্রাইম ব্যাংকের। ব্যাংকটির নিট মুনাফা গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল সোয়া সাত কোটি টাকা, যা এ বছর ৪৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ধারায় এর পরের অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- এমটিবি, সাউথইস্ট, পূবালী, ন্যাশনাল, ব্যাংক এশিয়া ও যমুনা ব্যাংক।

বিপরীতে বাকি ১৪ ব্যাংকের নিট মুনাফা হয়েছে ৩৬৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৩৭ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আল-আরাফাহ্র নিট মুনাফা কমেছে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল, এ বছর তা মাত্র ৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ইপিএস ৪৭ পয়সা থেকে কমে নেমেছে মাত্র ৩ পয়সায়। এমন অবস্থায় এর পরের অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলো হলো: স্ট্যান্ডার্ড, ওয়ান, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ট্রাস্ট, সোশ্যাল ইসলামী, আইএফআইসি ব্যাংক।