intech-দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইনটেকের শেয়ারদর সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক মাসে ইনটেকের দর বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। এ দর বৃদ্ধি কোনভাবেই স্বাভাবিক নয় মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষও বলছেন, শেয়ারদর বৃদ্ধির মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই । শেয়ারটি নিয়ে কারসাজির সন্দেহ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইনটেকের শেয়ারদর সম্প্রতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত তিন মাস ধরেই এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। আর গত এক মাসে এই দর বৃদ্ধির হার আরও বেড়েছে। এক মাস আগে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ১৮ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর থেকে টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে দর। সর্বশেষ গতকাল এ শেয়ার লেনদেন হয় ৩৪ টাকা ২০ পয়সায়।  অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারদর বাড়ছে প্রায় ৮৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতও (পিই) অনেক বেশি। বর্তমানে ১১৬.৫৬তে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের পিই। ব্যাকরণগতভাবে এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিকে সহজভাবে নিচ্ছেন না বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা আগের চেয়ে বাড়লেও সে তুলনায় দর বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। এই শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এমন মন্তব্য করেন তারা। অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি নজর এড়ায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষের। যে কারণে তারা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। জবাবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই ২০১৭-মার্চ ২০১৮) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২২ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময় ছিল ১৪ পয়সা। সর্বশেষ বছরে প্রতিষ্ঠানটি দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা মুনাফা করে। অন্যদিকে শেয়ারহোল্ডারদের সন্তোষজনক রিটার্ন দেওয়ার নজির নেই কোম্পানিটির। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে ইনটেক।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক টাকা ৯ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১১ টাকা ২০ পয়সা। এদিকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে সমাপ্ত হিসাববছরেও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছেন ইনটেক শেয়ারহোল্ডাররা। সে সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল এক টাকা দুই পয়সা। এ ক্যাটেগরির প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা, মূলধন ২৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৫২ লাখ টাকা। এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা দুই কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার ৩২১টি।

এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে কোম্পানির মাত্র চার দশমিক ৭৭ শতাংশ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং বাকি ৮৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে। দর বৃদ্ধির কোনো সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা-তা জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের কাছেও রহস্যময় মনে হচ্ছে। তবে কেন দর বাড়ছে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, কোনো একটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে মন্তব্য করা মুশকিল। তবে বিনিয়োগকারীদের কাছে যদি কোনো শেয়ার অতিমূল্যায়িত মনে হয়, তখন ওই শেয়ারে বিনিয়োগ না করা ভালো। কারণ অধিক মূল্যের শেয়ার কিনলে এক সময় তা বিনিয়োগকারীর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।