fakrulদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এই ঘটনায় তারেক রহমান জড়িত বলে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী-নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দূরভিসন্ধিমূলক ছাড়া আর কিছু নয় বলেও দাবি করেছে দলটি। সোমবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সবচেয়ে মুখে বেশি প্রচারিত হচ্ছে, তা হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত। আইনমন্ত্রী বলছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই মামলায় রায় হবে, সেতুমন্ত্রী বলেছেন, এই রায়ের পর বিএনপির নেতৃত্ব সংকটে পড়বে।’

ফখরুল বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি হলো- বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা নির্বিঘ্নে ক্রমাগত এমন বক্তব্য দিতে পারেন যা মামলার রায় প্রভাবিত করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারকালেও এমনটা হয়েছে এবং তার ফলাফল মামলার রায়ে প্রতিফলিত হয়েছে।’

‘কোন মামলার রায় কবে হবে তা এখন আর বিচারকরা নন, আইনমন্ত্রী স্থির করেন। বিচার বিভাগের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকলে এটা তিনি করতে পারেন তা সহজেই বোধগম্য।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১১ সালে পুলিশ রিপোর্ট পেশ হওয়ার আগেই তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান রহমানকে আসামি করা হবে। হয়েছেও তাই। ওবায়দুল কাদের রায় হওয়ার আগেই কী করে বলতে পারেন- এই মামলার রায় হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্ব সংকটে পড়বে। অর্থাৎ তিনি জানেন, কী রায় হতে যাচ্ছে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা নিয়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য কোনো বিচারেই গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসনের পক্ষে বলা যাবে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা এবং আইভি রহমানসহ অনেক নারী পুরুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনার আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরাও সেই ঘটনার জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কারণ আমরাও চাই এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। কিন্তু এই ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার ও সরকারি দল যেভাবে বিএনপি এবং বিএনপির মূল নেতাদের অন্যায়ভাবে বিপদাপন্ন করার জন্য সরকারের পুলিশ, গোয়েন্দা, তদন্ত কর্মকর্তা এমনকি বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নগ্ন প্রয়াস চালাচ্ছে তা কোনো সভা সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার এমন অরাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে অচল। সরকার অনির্বাচিত এবং এর ফলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না হওয়ার জন্যই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতার এমন অপব্যবহার করার সাহস পাচ্ছে।’

সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই মামলায় রেড এলার্ট জারি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় প্রয়োজনীয় তদন্ত করে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পেয়ে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ লিখিতভাবে সেই রেড এলার্ড প্রত্যাহার করে নেয়।’

‘রাজনৈতিক কারণে তারেক রহমানকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেয়ার আওয়ামী লীগের ইচ্ছা পূরণ হয়নি, হবেও না। প্রকৃতপক্ষে সরকার গোটা বিষয়টিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বলেই দলীয় একজন নেতাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার অন্যতম আসামিকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল। কিন্তু সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে মুফতি হান্নান সরকারের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছেন। এখন তারা বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টায় রত হয়েছে।’

সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় রাজনীতিতে এর বিষময় পরিণতি সম্পর্কে পুনরায় ভাবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি। অন্যায়ভাবে মিথ্যা অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে সরকার জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেশে জনগণের মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করবে যা কারো জন্যই প্রত্যাশিত নয়। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বরং আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে দেশের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয় মনে করি। নতুন সংকট সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিত বিদ্যমান সমস্যাদি সমাধানের উদ্দেশে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ।