elecationদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের বছর ২০১৮ সাল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এটা কোনো হারজিতের বাহাস নয়। ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়েই চলছে যুক্তি-তর্ক বাহাস। রাজধানীতে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ কী হবে তা নিয়ে কৌতূহল আরও জোরালো হয়েছে রাজনীতি সচেতন সকল শ্রেণী-পেশার জনগণের মাঝে।

সেই সাথে সবার মাঝে আশাবাদের সাথে নানামুখী প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মুখে সেই একই কথা, আমরা চাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সার্বিকভাবে শান্তির জন্যই তা অপরিহার্য।

একদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’র অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ কিংবা ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারে’র কোনো বিকল্প নেই।

নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে আগামী ডিসেম্বরই হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তিন মাস আগে অর্থাৎ আগামী অক্টোবরে গঠন হবে নির্বাচনকালীন সরকার। এই সরকারে কারা কারা থাকবেন, সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা। এ নিয়ে এরই মধ্যেই কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য  জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সরকার ২০১৪ সালের আদলেই হবে। জাতীয় সংসদে বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে থেকে আনুপাতিক হারে সদস্য নিয়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভা দায়িত্ব পালন করবে।

ওই মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা একটি নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ওই মন্ত্রিসভা ছোট হলেও, এর সংখ্যা এবং ব্যক্তিদের বাছাই করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। তবে এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে একটু বাড়তে পারে। সেটিও ২০ এর মধ্যে থাকবে।’

মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। জাতীয় পার্টির বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিবর্তন করা হতে পারে।

ওই মন্ত্রী আরও জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মন্ত্রিসভার জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করেছেন। তারা হলেন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কাজী ফিরোজ রশীদ। এখান থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে পারেন। জাসদ থেকে হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন নির্বাচনকালীন সরকারে যুক্ত হতে পারেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বেশ কিছু চমক আনবেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আর না নিলে কী হবে, সে নিয়েই সাজানো হচ্ছে পরিকল্পনা।

যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের শরিক দলের দুই একজন নেতাকেও সরকারে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলডিপি সভাপতি কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর নাম আছে আলোচনায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজি থাকলে তার জন্যও জায়গা থাকবে।

জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবরেই হবে। তবে কারা কারা থাকবেন সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কাজ চলছে।’

২০১৪ এর নির্বাচনের আগে প্রথম দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল, সে সময় প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তৎকালীন জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকেও নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ নিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনড় থেকে ঐ নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ওই অন্তর্বতী সরকারে বেগম রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কাস পার্টির রাশেদ খান মেনন যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারে মন্ত্রী ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, নূরুল ইসলাম নাহিদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, খন্দকার মোশারফ হোসেন প্রমুখ। সে সময় তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুর মতো ডাকসাইটে নেতারা যারা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন না, তাদেরকেও নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়। আর জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ছিল অনেকটাই চমকের মতো।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, এবারও নির্বাচনকালীন সরকারে অনেক নতুন মুখ থাকবে। তবে, নির্বাচনকালীন সরকারকে একটি নিরপেক্ষ আদল দেওয়ার ভাবনা আওয়ামী লীগে বেশ জোরেসোরেই আলোচিত হচ্ছে।